আল্প আরসালান ভলিউম ২৯ বাংলা সাবটাইটেল উসমান অনলাইন বাংলা
অনুবাদ মিডিয়া আল্প আরসালান ভলিউম ২৯ বাংলা সাবটাইটেল
আল্প আরসালান ভলিউম ২৯ বাংলা সাবটাইটেল দেখতে পাবেন পোষ্টের নিচে।
আল্প আরসালান সাহসী সিংহের আগমন
সেলজুকি সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা ভূমিল বেগ ৪ হিজরিতে (১০৬৩ খ্রিষ্টাব্দ) মারা যান। একজন কল্যাণকামী শাসক হিসেবে ঐতিহাসিকরা তার প্রশংসা করেছেন। সময়মতো সালাত আদায়ের ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন কঠোর। সোমবার বৃহস্পতিবার নিয়মিত নফল সিয়াম রাখতেন।
তুগ্রিল বেগের কোনো সন্তান ছিল না। মৃত্যু র আগে তিনি তার ভাইয়ের ছেলে সোলাইমান বিন দাউদের জন্য অসিয়ত করে যান। কিন্তু তুগ্রিল বেগের মৃত্যু র পরে দেখা যায় সোলাইমান বিন দাউদের প্রতি লোকজনের আগ্রহ কম, এবং তার পক্ষে পর্যাপ্ত জনসমর্থনও নেই। ফলে তার ভাই মুহাম্মদ বিন দাউদ ক্ষমতায় আরোহণ করেন। তার নামে সর্বত্র খুতবা চালু হয়। তিনি পরিচিত হন আলপ আরসালান নামে। এই নামটি গঠিত হয়েছে দুটি তুর্কি শব্দের সমন্বয়ে। আলপ অর্থ সাহসী এবং আরসালান অর্থ সিংহ।
আলপ আরসালানের জন্ম ৪২৪ হিজরিতে। বাল্যকাল থেকেই তার মধ্যে প্রতিভার বিচ্ছুরণ দেখা যাচ্ছিল। যৌবনের শুরুতে আলপ আরসলান তার চাচা তুগ্রিল বেগের সাথে শিয়া ওবাইদিদের বিরুদ্ধে প্রচারণায় অংশ নিয়েছিলেন। তখন তাঁর বাবা ছিলেন খোরাসানের প্রশাসনের দায়িত্বে। আলপ আরসলান খোরাসানে ফিরে আসার পরে তিনি বাবার পরামর্শে প্রশাসনের কাজ শুরু করেছিলেন। সেখানে থাকাকালীন তাঁর পিতা তাকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন নিযামুল মুলকের সাথে, যিনি ছিলেন ইসলামের ইতিহাসের অন্যতম মন্ত্রী এবং পরবর্তী কয়েক দশক তিনিই ছিলেন সেলজুকি সাম্রাজ্যের প্রধান উপদেষ্টা।
পিতার মৃত্যু র পর আলপ আরসালান ৫ বছর খোরাসানের দায়িত্বে নিযুক্ত ছিলেন। চাচার মৃত্যু র পর তিনি হলেন সেলজুক সাম্রাজ্যের কর্ণধার। তার চাচা একটি বিশাল অঞ্চল জয় করে নিজের ক্ষমতা সুসংহত করেছিলেন, আরসালান সেই বিস্তৃত এলাকার মালিক হলেন। আলপ আরসালান যখন ক্ষমতায় বসলেন তখন তার এই সাম্রাজ্যের বিস্তৃতি ছিল আমু দরিয়া থেকে দজলা নদী পর্যন্ত।
ক্ষমতায় বসে আলপ আরসালান প্রথমেই নিযামুল নুলককে তার প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করেছিলেন। তার এই সিদ্ধান্ত পরবর্তী সময়ে সেলজুক সাম্রাজ্যকে উপকৃত করেছিল। নিযামুল মুলক ছিলেন ইসলামের ইতিহাসের প্রভাবশালী ও মেধাবী একজন ব্যক্তিত্ব। সাম্রাজ্য পরিচালনার সকল কলাকৌশল তিনি বেশ ভালোভাবেই রপ্ত করেছিলেন।
একদিকে সাহসী সুলতান আলপ আরসালান অন্যদিকে দক্ষ কূটনীতিক নিয়ানুল মুলক, এই দুইয়ের সমন্বয় সেলজুক সালতানাতকে বহুদুর এগিয়ে নিয়েছিল।ক্ষনতার আরোহণের পরের বছরই আলপ আরসালানকে শক্তিশালী একটি বিদ্রোহ সামাল দিতে হয়েছিল। ৪৫৬ হিজরিতে শিহাবুদ্দৌলা কুতুপাশে সুলতানের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেন। তিনি শক্তিশালী ছিলেন এবং সুলতানের বাহিনীর তুলনায় তার বাহিনীটি বেশ বড় ছিল। শুরুর দিকে সুলতান বেশ আতঙ্কিত ছিলেন। তখন নিযামুল মুলক তাকে সান্ত্বনা দিয়ে বলেন, আপনি ভয় পাবেন না।
আমি আপনার জন্য এমন এক বাহিনীর খোঁজে আছি, যারা যে-কোনো বাহিনীকে পরাজিত করতে পারবে। সুলতান জিজ্ঞেস করলেন, কারা সেই বাহিনী? নিযামুল মুলক জবাব দিয়েছিলেন, তারা হলেন নেককার আলেম ও ফকিহদের জামাত। যারা নিয়মিত আপনার জন্য দোয়া করেন। এই কথা শুনে সুলতান চিন্তামুক্ত হন৷ কুতুলমুশের এই বিদ্রোহটি সুলতান বেশ সহজভাবেই সামাল দিতে পেরেছিলেন। কুতুলমুশের বিশাল বাহিনী সুলতানের বাহিনীর সামনে পরাজিত হয়েছিল।
তুগ্রিল বেগের শাসনকালের শেষদিকে আব্বাসি খলিফা কায়েম বি আমরিল্লাহর সাথে তার সম্পর্কের কিছুটা অবনতি ঘটেছিল। তিনি খলিফার অমতে তার মেয়েকে বিবাহ করেন। ৪৫৬ হিজরিতে আলপ আরসালান খলিফার মেয়েকে বাগদাদে ফিরিয়ে নিয়ে আসেন। আলপ আরসালানের এ সিদ্ধান্তে খলিফা অত্যন্ত খুশি হয়েছিলেন। তিনি বাগদাদের মসজিদগুলোতে আলপ আরসালানের জন্য দোয়া করার নির্দেশ পাঠিয়েছিলেন। দোয়ার মধ্যে বলা হয়েছিল—
“হে আল্লাহ, মহান সুলতান আযদুদ দৌলাহ, জাতির শিরোমণি আলপ আরসালান, আবু শুজা (দুঃসাহসী বীর) মুহাম্মদ ইবনু দাউদকে আপনি সার্বিক কল্যাণ দান করুন’। এরপর খলিফা প্রতিনিধির মাধ্যমে সুলতান আলপ আরসালানের কাছে নিজের বিশেষ তরবারি উপহার পাঠিয়েছিলেন। খলিফার সাথে সুলতানের সুসম্পর্কের ফলে আলপ আরসালান অনেকটাই নিশ্চিন্ত হন।(১১) সাম্রাজ্যকে সমৃদ্ধ করার জন্য খলিফার সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখা জরুরি ছিল। যদিও খলিফা দুর্বল ছিলেন এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তার নিজের কোনো সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা ছিল না, তবু তার পদটির প্রতি সাধারণ মানুষের শ্রদ্ধা ও আবেগ ছিল।
শাসনক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়ে আলপ আরসালান দুটি দিকে মনোযোগ দিয়েছিলেন। প্রথমত, তিনি চাচ্ছিলেন ফাতেমিদের প্রভাব খর্ব করতে। দ্বিতীয়ত, তিনি চাচ্ছিলেন উম্মাহর মধ্যে জিহাদের চেতনা জাগিয়ে তুলতে, যে চেতনা উম্মাহ ভুলে গিয়েছিল নিজেদের আভ্যন্তরীণ বিবাদের কারণে।
ফাতেমিদের বিরুদ্ধে সুলতান আলপ আরসালান প্রথম পদক্ষেপ নেন ১০৬৯ খ্রিষ্টাব্দে (৪৬২ হিজরি), যখন মক্কার শাসকের দূত মুহাম্মদ ইবনে আবু হাশিম সুলতান আলপ আরসলানের সাথে দেখা করতে আসেন। তিনি সুলতানকে জানান মক্কায় ফাতেমি খলিফা আল কায়েম বি আমরিল্লাহর নামে খুতবা পড়া হয়। সুলতান আলপ আরসালান তাকে আদেশ দেন ফাতেমি খলিফার নামে খুতবা পড়া বন্ধ করতে হবে এবং ফাতেমিদের নিয়ম মতো আযানের সময় ‘হাইয়া আলা খাইরিল আমাল’ বলাও বন্ধ করতে হবে। মক্কার শাসক এই প্রস্তাব মেনে নিয়েছিলেন।
মূলত মক্কা মদিনায় ফাতেমিরা কখনোই তাদের মতবাদের পক্ষে ব্যাপক সমর্থন তৈরি করতে পারেনি। সেখানে তারা যেটুকু কর্তৃত্ব অর্জন করেছিল তা ছিল পেশিশক্তির জোরে। সেসময় তারা আব্বাসি খলিফার দুর্বলতার সুযোগ নিয়েছিল। কিন্তু ক্ষমতার মঞ্চে সেলজুকদের আগমনের ফলে তাদের সাজানো পরিকল্পনার ছক উল্টে যায়। মক্কার শাসক সেলজুকদের আগমনের এই সুযোগ নিয়েছিলেন। তিনি খুশিমনেই ফাতেমি শাসকের নামে খুতবা পড়া বন্ধ করে দেন। আযানের মধ্যেও ফাতেমি রীতির অনুসরণ করা বন্ধ করেন। এ সংবাদ শুনে সুলতান আলপ আরসালান খুশি হয়ে তাকে ৩০,০০০ দিনার এবং সম্মানের পোশাক উপহার দেন এবং বার্ষিক পেনশনের ব্যবস্থা করেন।
সুলতানের ক্রমবর্ধমান শক্তির প্রভাব পড়েছিল সর্বত্র। ৪৬৩ হিজরিতে আলেপ্পোর জনসাধারণ একত্র হয়ে শহরের শাসক মাহমুদ বিন সালিহর কাছে দাবি জানাইয়—এখন থেকে জুমার খুতবা আব্বাসি খলিফা ও সুলতান আলপ আরসালানের নামে
আবারও জিহাদের চেতনা ফিরিয়ে আনতে। কুফফারদের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিতে।
ক্ষমতায় আরোহণের পরের বছর ৪৫৬ হিজরিতে সুলতান আলপ আরসালান তার বাহিনী নিয়ে রওনা হলেন মারানদা শহরের উদ্দেশ্যে। এখানে এসে তিনি পুত্র মালিক শাহ ও উযির নিযামুল মুলকের নেতৃত্বে একটি বাহিনী প্রস্তুত করে রোমানদের মোকাবেলা করার জন্য প্রেরণ করেন। এই বাহিনী রোমানদের বেশ কয়েকটি কেল্লা জয় করে। তারা সুরমারি দুর্গও জয় করে। এরপর এই বাহিনী মারিয়াম নাশিন শহর অবরোধ করে।
এটি ছিল খ্রিষ্টানদের কাছে পবিত্র একটি শহর। এখানে পাদ্রী ও খ্রিষ্টান শাসকদের অনেকে বসবাস করত। শহরের চারপাশ ছিল শক্ত পাথুরে প্রাচীরবেষ্টিত। এর বাইরে ছিল পরিখা। ফলে শহরবাসী নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে বেশ নিশ্চিন্ত ছিল। মুসলিম বাহিনী নৌকার সাহায্যে পরিখা অতিক্রম করে প্রাচীরের কাছে পৌঁছে যায় এবং তারা প্রাচীরের গায় কাঠের সিঁড়ি স্থাপন করে। এসময় রোমানরা তির নিক্ষেপ করছিল; কিন্তু মুসলিম মুজাহিদরা অসামান্য সাহসিকতা দেখিয়ে নিজেদের কাজ অব্যাহত রাখেন। বেশ কয়েকজন মুজাহিদ শাহিদ হয়ে গেলেও অনেকে প্রাচীরের শীর্ষে উঠতে সক্ষম হন। তাদেরকে দেখে শহরবাসী সাহস অনেকে ইসলাম গ্রহণ করে।
নিযামুল মূলক ও মালিক শাহর নেতৃত্বাধীন এই বাহিনী এরপর আর্মেনিয়ার একাংশ দখল করে নেয়। মুসলিম বাহিনী জয় করে বেশ কিছু শহর ও দুর্গ। তবে এসব অভিযানে সুলতান আলপ আরসালানকে চড়া মূল্য দিতে হয়। তার সেনাবাহিনীর প্রচুর সৈন্য এসব অভিযানে নিহত হয়। এরপর সুলতান আলপ আরসালান তার বাহিনী নিয়ে জর্জিয়ার একটি শহর অবরোধ করেন।(১৮) শহরটি ছিল সুরক্ষিত। এর এক পাশে ছিল সুউচ্চ পর্বতমালা। অন্যদিকে প্রশস্ত নদী। প্রথমদিকে মুসলিম সেনারা এই শহর দেখে মনোবল হারিয়ে ফেলে।
কিন্তু দৃঢ়প্রতিজ্ঞ সুলতান আদেশ দিলেন শহর অবরোধ করে রাখতে। সুলতান সেনাবাহিনী পারাপারের জন্য নদীর ওপর একটি পুল নির্মাণ করেন। ফলে বাহিনী সহজেই নদী অতিক্রম করে ফেলে। এরপর রোমানদের সাথে সেলজুকদের তীব্র যুদ্ধ শুরু হয়। এই যুদ্ধে মুসলিম বাহিনী জয়লাভ করে শহরে প্রবেশ করে। তারা শহরের গম্বুজগুলো ভেঙে ফেলে। এই অভিযানে এত বেশি গনিমতের মাল অর্জন হয়েছিল, যা গণনা করাও সম্ভব হয়নি।
এই অভিযানে সুলতান আরমেনিয়ার আরও কিছু অঞ্চল, যেমন কারাস, আনি এসব শহর জয় করেন। আনি শহরে তিনি নিজের পক্ষ থেকে প্রশাসক নিয়োগ দেন। সুলতানের এসব জয়ে মুসলিম বিশ্বে বয়ে যায় আনন্দের বন্যা। খলিফার কাছে সুলতান বিজয়ের সংবাদ জানিয়ে যে পত্র লিখেছিলেন তা পড়ে শোনানো হয় বাগদাদে খলিফার প্রাসাদে। ফিরতি পত্রে খলিফা ছিলেন সুলতানের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। তিনি সুলতানের জন্য দোয়া করেছিলেন।
৪৫৭ হিজরিতে সুলতান আলপ আরসালান আমু দরিয়া অতিক্রম করে জান্দ(১) শহরে পৌঁছে যান। শহরের অধিপতি সুলতানের মোকাবেলা করার সাহস হারিয়ে ফেলে। সে বশ্যতা স্বীকার করে নেয় এবং কর দিতে রাজি হয়। সুলতান ফিরে আসেন।৪৬৮ হিজরিতে সুলতান আলপ আরসালান তার পরবর্তী সুলতান হিসেবে পুত্র মালিক শাহকে মনোনীত করেন।
আল্প আরসালান ভলিউম ২৯ বাংলা সাবটাইটেল