আল্প আরসালান ভলিউম ২২ বাংলা সাবটাইটেল উসমান অনলাইন
ভলিউম দেখতে নিচে যান
১৬১২ সালে একত্রিত প্রদেশসমূহকে সীমিত ব্যবসায়ের শর্তে ইংরেজ ও
ফরাসিদের মতো সুবিধা দেয়া হয়। এতে করে মুফতির কঠোর নিষেধাজ্ঞা
সত্তেও তামাক প্রচলিত হয় তুর্কিতে। অটোমান তুর্কিরা এতটা সাদরে গ্রহণ
করে যে প্রায় অর্ধ শতাব্দীর মাঝে জাতীয় প্রতীকে পরিণত হয়__পাইপ।
সুলেমানের অধীনে ইতিমধ্যেই কফির প্রচলন হয়েছিল৷ কবির ভাষায়, আফিম
আর ওয়াইনের সাথে কফি ও তামাকের প্রচলনে এখন তুর্কিরা আনন্দ ভুবনের
চার উপাদানের স্বাদ গ্রহণ করতে পারবে । কিন্তু মুসলিম বিধান রক্ষকদের
ভাবায়, “শয়তানের চার সহচরই ছিল এরা ।”
এভাবে সুলেমানের শাসনামল শেষে অটোমান সাম্রাজ্যজুড়ে শুরু হয়
ইংরেজ প্রভাব ও ইংরেজ-ফরাসি দ্বন্ধ ।
১৬৪৮ সালে সুলতান ইববাহিমের হত্যাকাণ্ড ও তার পুত্র, বালক সুলতান চতুর্থ
মাহমুদের অভিষেকের সাথে সাথে অভ্যর্থান শুরু হয়নি। মাহমুদের
শাসনামলের প্রথম আট বছর ধরে জানিসারিস ও সিপাহিদের মাঝে মতভেদের
দরুন রাজদ্রোহ চলতেই থাকে । আর এতে সর্বতভাবে অনুপ্রেরণা ঢালেন দুই
সুলতানা । মাহমুদের মাতা ও দাদি। এছাড়া বিদেশ থেকেও আসতে থাকে
নতুন হুমকি। ক্রীটে অটোমানদের লাগাতার অভিযানের ফলে এটা স্পষ্ট হয়ে
যায় যে, তুর্কিরা আর সমুদ্র শীসনের ক্ষমতা রাখে না। সপ্তদশ শতকের মাঝ
বরাবর থেকে ভেনেশীয়দের হাতে চলে যায় এ ক্ষমতা । এছাড়াও মাল্টিজ এবং
তাক্কানরাও অটোমান নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। তুর্কিরা এমনকি নিজেদের
সমুদ্র সীমা বা উপকূলের প্রতিরক্ষাতেও ব্যর্থ হতে থাকে।
দার্দেনালেসে অটোমান ও তুর্কিদের মাঝে বিশাল এক যুদ্ধ হয়ে যায়
যেখানে ভেনেশীয়রা তুর্কিদেরকে পরাজিত করে তুর্কিদের রসদ বহনকারী
জাহাজ ধ্বংস করে দেয়। এর ফলে প্রণালি পথে ভেনেশীয়দের নিয়ন্ত্রণ
পায়। জনরোষ ছড়িয়ে পড়ে আর সবার মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে যে
রাজধানী আক্রমণ হতে যাচ্ছে।
শুধু এই সংকটে পড়ে মাহমুদের মাতা সুলতানা তুরহান গোপনে দক্ষ
কোপরুলু মাহমুদকে অটোমান অভ্যত্থানের দায়িত্ব অর্পণ করে । প্রধান উজির
পদে নিয়োগ দেয়া তাকে ।
উত্তর আনাতোলিয়ার কোপরু শহরে ঝোড়ো হওয়া একাত্তর বছর বয়সী
মাহমুদের শর্ত সাপেক্ষে প্রধান উজির পদে দায়িতু পালনে রাজি হন ঃ তার
সমস্ত কাজ বিনা প্রশ্নে বৈধতা পাবে; সব দপ্তরে কর্মী নিয়োগে পূর্ণ স্বাধীনতা
ভোগ করবেন তিনি; কোনো উজির বা কর্মী তার ওপরওয়ালার সাথে
প্রতিযোগিতা করতে পারবে না; রাজদরবারে সমস্ত প্রতিবেদন তার মাধ্যমে
যাবে। সংক্ষেপে সুলতানের মতো একচ্ছত্র ক্ষমতার দাবি করে প্রধান উজির ।
সুলতানা তুরহান নিজের পুত্রের হয়ে সমস্ত শর্ত মেনে নেন। মুফতি ফতোয়া
জারি করে সমস্ত কাজে বৈধতা দেয় ও সুলতান মায়ের প্রতিজ্ঞা রক্ষায় তাকে
প্রধান উজির পদে নিয়োগ দেন। নিয়োগপ্রাপ্তির পরে বলকান পর্বতমালার
খ্রিস্টান; আলবেনিয়ার নিজ শহরের লোক ও বুলগেরিয়া থেকে অনেককেই
নিয়োগদান ও ইসলামে ধর্মীস্তরিত করে প্রধান উজির। এর মাধ্যমে
সেনাবাহিনী ও প্রশাসনে নতুন বিশ্বস্ততা ও প্রাণশক্তির সঞ্চার হয়।
সাম্রাজ্যের সরকার পরিচালনার ভার কার্যত সম্পূর্ণভাবে কোপরুলুর হাতে
ও পরবর্তীতে তার পুত্র আহমেদের হাতে ছেড়ে দেন সুলতান । নিজে সরকার
পরিচালনা না করলেও পিতা ও পুত্রকে সমস্ত ষড়যন্ত্র ও সাম্রাজ্যের শক্রদের
বিরুদ্ধে সমর্থন দান করতে থাকেন। এভাবে পরবর্তী বিশ বছরে দুই
রাজতৃকালের মধ্যবর্তী সময়টুকু বাদে সপ্তদশ শতকের শেষ নাগাদ অটোমান
রাষ্ট্র, রাজকীয় পরিবারতন্ত্রের কাঠামোর বাইরে, প্রধান উজিরের শক্তিশালী
মন্ত্রিপরিষদের স্বাদ গ্রহণ করে। এই পরিবার তাদের অসাধারণ বুদ্ধিমত্তী ও
থেকে সরিয়ে প্রধান উজিরের প্রাসাদ বাব-ই-আলীতে হস্তান্তর করে।