উসমান অনলাইন আল্প আরসালান ভলিউম ১৭ বাংলা সাবটাইটেল –
আনাতোলিয়াতে সমস্যা লেগেই থাকে । কৃষিকাজ না হওয়ায় দুর্ভিক্ষ দেখা
দেয়। কৃষকদের জমি সামরিক নেতারা বেদখল করে নেয়। পশু পালনের জন্য
খামার গড়ে তুললে আনাতোলিয়া জুড়ে কৃষিকাজের ধরন বদলে যায়।
হয় অটোমান সরকারের ।
এই সুযোগে ১৬০৩ সালে শাহ আব্বাস তাবরিজ
দখল করে নেয় ও অটোমান দুর্গ কার্জ দখল করে নেয়। পাঁচ বছরের মধ্যে
তুর্কি অধিকৃত বিভিন্ন পারস্য ভূমি পুনর্দখল করে ককেশাস অঞ্চলে অটোমান
নিয়ন্ত্রণ ভেঙে দেয় শাহ আব্বাস। ১৬১২ সালে এক শান্তি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে
তুর্কিরা ১৫৯০ সালে শান্তিচুক্তির মাধ্যমে পাওয়া বেশ কয়েকটি ভূখণ্ডের
মালিকানা ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়।
এরই মাঝে অটোমান সিংহাসনে অভিষেক ঘটে সুলতান প্রথম
আহমেদের । সুলতান তৃতীয় মুরাদের মৃত্যুর পর তীর পুত্র তৃতীয় মাহমুদ
নিজের উনিশ জন ভাইকে হত্যা করে। এমনকি হারেমে গর্ভবতী অবস্থায় থাকা
ভাইদের প্রিয় দাসিদেরও বস্তাবন্দি করে বসফরাসে নিক্ষেপ করা হয়। যেন
তারা সিংহাসনের দাবিদার হিসেবে কাউকে জন্ম দিতে না পারে।
করা শেষ সুলতান। এর পর থেকে সব রাজকুমারকে প্রায় খাচাস্বরূপ
সেরাগলিও রাজপ্রাসাদে দিন কাটাতে হতো বিদ্রোহের ভয়ে ।
মাহমুদের ওপর তার ভেনেশীয়া মা সুলতানা ভালিদে”র প্রভাব ছিল
বেশি। প্রভাব বলয় থেকে পুত্রকে হারানোর ভয়ে তিনি মাহমুদকে ইস্তাম্বুলের
বাইরে যেতে না দিয়ে নারীসঙ্গের প্রতি আগ্রহী করে তোলেন।
কিন্তু ১৫৯৬ সালে সুলতান মাহমুদ ইউরোপে যাত্রা করেন সেনাবাহিনী
নিয়ে।
অটোমান বাহিনী আরলার্ড অবরোধ ও দখল করে নেয়। কিন্তু যুদ্ধের
ভয়াবহতায় ভীত হয়ে সুলতান পশ্চাদপসরণের চেষ্টা চালায় । কিন্তু যুদ্ধকালীন
মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকের পর নবীজির স্তম্ভ হাতে নিয়ে বাহিনীর সাথে থাকতে
মনস্থির করেন। হাওয়া বইতে থাকে উল্টো দিকে । শক্রুর ঘাঁটিতে হামলা
করতে গিয়ে খ্রিস্টানরা নিজেদের শৃঙ্খলা ভেঙে ফেলে। তুর্কিরা এ সুযোগে
চড়াও হয়ে বিনাশ করে ফেলে তাদের ।
খ্রিস্টানদের এ পরাজয়ে ত্রিশ হাজারের বেশি জার্মান ও হাঙ্গেরীয় সেনা
নিহত হয়। বিভিন্ন লুগ্ঠনদ্রব্যের মাঝে নিখুঁত কারুকাজের একশটি কামানও
লাভ করে তুর্কিরা । তুর্কিরা এ জয়ের সুবাদে উত্তর দানিয়ুবের প্রায় বেশির ভাগ
অঞ্চলে নিয়ন্ত্রণ ফিরে পায়। আরো কয়েক শতাব্দী পর্যন্ত এ নিয়ন্ত্রণ বলবৎ
রাখতে সমর্থ হয় তারা ।
বিজয়ের বেশে ইস্তাম্বুলে ফিরে আসেন সুলতান মাহমুদ । আবারো হারেমে
আনন্দ শয্যায় মেতে ওঠে রাজ্য পরিচালনার ভার অর্পণ করেন ভেনেশীয়
মায়ের ওপর । ১৬০৩ সালে অক্টোবরের শেষ দিকে এক দরবেশের আগমন
ঘটে সুলতানের রাজদরবারে । দরবেশ ভবিষ্যৎ বাণী করে যে, পথ্যান্ন দিন পরে
এক বিপর্যয় নেমে আসবে সুলতানের ওপর। আর নিয়তির পরিহাসে
কুসংস্কারাচ্ছন্ন হয়ে ঠিক পঞ্চানন দিন পরেই মৃত্যুবরণ করেন সুলতান তৃতীয়
মাহমুদ ।
কিশোর আহমেদ পিতার শূন্যস্থান পূরণ করেন। কিন্তু ভ্রাতৃহন্তা থেকে
বিরত থাকেন। কারণ তার তাই মুস্তাফা ছিল উন্মাদ। আহমেদ ছিলেন প্রথম
অটোমান সুলতান, যিনি সিংহাসনে বসার পর সুন্নত করিয়েছেন।
ছোটবেলাতেই আহমেদের মাঝে বলশালী ও মাথা গরমের সুলতানসুলভ
আগুন দেখা যায়। যখন তীর প্রধান উজির খাজানা থেকে অতিরিক্ত অর্থ না
পেয়ে হাঙ্গেরিতে আক্রমণ করতে প্রত্যাখ্যান করে, সুলতান তাকে এক সংবাদে
জানান : “নিজের জীবনের মায়া থাকলে এখনি অগ্রসর হোন।” জানিসারিস ও
সিপাহিরা নিজেদের বেতন-ভাতা নিয়ে বিদ্রোহ করে সুলতান তৎক্ষণাৎ
উচ্চপদস্থদের ডেকে পাঠান। এক নিরবতার পরে সুলতানের কাছে
অপরাধীদের নাম বলা হলে তৎক্ষণাৎ তাদের মৃত্যুদণ্ড জারি করেন আহমেদ ।
একই ভাবে ১৬০৬ সালের মে মাসে দিওয়ানের ওপর চড়াও হন তিনি।
পারস্য অভিযানের জন্য স্কুটারিতে সৈন্যরা জড়ো হলেও সুলতান এ অভিযান
স্থগিত করার আদেশ দেন। নিরবতার পর প্রধান মুফতি বলে উঠেন ইতিমধ্যে
অটোমানদের ঘোড়ার লেজবহুল স্তম্ভ এশিয়ার তীরে দাড় করিয়ে দেয়া হয়েছে।
পুরো পৃথিবী যেন দেখতে পায়। এখন পিছিয়ে আসা অসম্মানের ব্যাপার
হবে। সুলতান এরপর ফরহাদ পাশার নেতৃতে সীমিত অভিযানের আদেশ
দান করে। কিন্তু প্রয়োজনীয় অর্থ ও রসদ না থাকায় জানিসারিসরা বিদ্রোহ
করে বসে।
নিজের রাজত্বকালে সুলতান আহমেদ একার উদ্যোগে তেমন কোনো
কিছুই করেননি । খামখেয়ালী ও বিবেচনার অভাব থাকায় সৎ উপদেষ্টা
নিয়োগে ব্যর্থ হন এবং হারেমের প্রভাবে প্রভাবিত হয়ে সবসময় প্রধান উজির
পরিবর্তন করতেন। সুলতানের কাছের মানুষেরা নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য
ব্যবহার করত তাকে । বিশেষ করে বলা যায় কৃষ্ণ খোঁজাদের প্রধানের কথা ।
সমসাময়িক এক ইটালিয়ের মতে, “কেউ জানতই না যে সত্যিকারের শাসক
কে।” অন্যদিকে হারেম, তার দুর্নীতির হস্ত প্রসার করে সবখানে । সুলতানের
পরিবারের নারীদের সাথে নিজের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা প্রিয় পাত্রদের বিবাহ
হওয়ার রীতি গড়ে ওঠে। রাজদরবারে এ আত্তবীয়রা বিভিন্ন ধরনের উৎপীড়নের
মাধ্যমে নিজেদের স্বার্থ রক্ষা করতে থাকে। এর ফলে সাম্রাজ্যের সরকারি
কাজের অবনতি ঘটতে থাকে ।
১৬১৭ সালে সাতাশ বছর বয়সে সুলতান প্রথম আহমেদের মৃত্যু ঘটে।
এরপর অটোমান ইতিহাসের চতুর্দশ প্রজন্ম পরে প্রথমবারের মতো পিতার
পর পুত্র নয়, অপ্রকৃতিস্থ প্রথম মুস্তাফা ভ্রাতার মৃত্যুর পরে সিংহাসনে অভিষিক্ত
হন। বসফরাসের মাছেদের খাবার হিসেবে রুটির টুকরার বদলে স্বর্ণ মুদ্রা ছুড়ে
দিতেন সুলতান মুস্তাফা ৷ দিওয়ানের হস্তক্ষেপে এ অভ্যাসের পরিবর্তন ঘটান।
এর পূর্বে জীবিত অবস্থায় সুলতান আহমেদ দুবার ভ্রাতৃহত্যা করতে
গিয়েও থেমে যান। প্রথমবার, হত্যাচেষ্টার পূর্ব রাতে ভয়ংকর স্বপ্ন দেখেন
আহমেদ । দ্বিতীয়বার প্রাসাদের বাগানে প্রহরী নিয়ে মুস্তাফা হেটে বেড়ানোর
সময়ে তীর এবং ধনুক হাতে তুলে নেন সুলতান আহমেদ । কিন্তু তৎক্ষণাৎ
হাত ও কাঠের পেশিতে ব্যথা অনুভব করায় এ প্রচেষ্টা বাতিল হয়।
সিংহাসনে আরোহণের সাথে সাথে মুস্তাফার অযোগ্যতা স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
ফলে আবারো তাকে নির্বাসনে পাঠানো হয়। সিংহাসনে অভিষেক ঘটে
আহমেদের চৌদ্দ বছর বয়সী পুত্র ওসমানের ।
কিশোর ওসমান স্বপ্ন দেখতেন নিজের পূর্বপুরুষ সুলেমানের মতো মার্শাল
আর্টে দক্ষতা লাভ করবেন। বাহু চালনায় দক্ষ ছিলেন তিনি আর প্রায়ই
যুদ্ধবন্দি বা নিজের বালক ভূত্যদের ওপর তীর-ধনুকের নিশানা অনুশীলন
করতেন। যদিও উভয় বিদেশি সীমান্তে শান্তি বিরাজ করছিল তার পরেও
মন্ত্রিপরিষদের বাধা সত্তেও পোলাগ্ডের বিরুদ্ধে যুদ্ধযাত্রার আদেশ দেন
ওসমান।
প্রাথমিকভাবে বিজয়ের পর ১৬২১ সালে, সুলেমানের সময়ের পর থেকে
সবচেয়ে বড় হিসেবে বৃহৎ এক বাহিনী গঠন করেন ওসমান। যাত্রাপথ ছিল
অত্যন্ত কষ্টকর। নদীর ওপর সেতু নির্মাণ কাজেও বাধা আসে বিভিন্নভাবে ।
তুর্কি বাহিনী ছত্রভঙ্গ হয়ে ভয় পেয়ে পালিয়ে যাওয়া শ্রেয় মনে করে শত্রুর
সামনে পড়ার হাত থেকে ।
এভাবে পরাজয় স্বীকার করে ইস্তাম্বুলে ফিরতে বাধ্য হয় সুলতান ও তার
বাহিনী । ক্ষয়ক্ষতি হয় প্রচুর ।