বারবারোসলার ভলিউম ৩২ বাংলা সাবটাইটেল উসমান অনলাইন বাংলা
আর্জুরামের গভর্নর মাহমুদ পাশা ছিলেন জানিসারিসদের জন্মশক্র এবং ওসমানের এশিয়া অভিযানের উৎসাহদাতা। নিজের বাহিনী নিয়ে মধ্য ও পূর্ব আনাভোলিয়ার নিয়ন্ত্রণ ফিরিয়ে আনে মাহমুদ পাশা । ইস্তামুলে উলেমা সম্প্রদায় বিদ্রোহের চেষ্টা করলে আইন ও সামরিক জনগণ মিলে নতুন প্রধান উজির হিসেবে সৎ হিসেবে বিখ্যাত আলী পাশাকে নিয়োগ দেয়া হয়। এরপর অপ্রকৃতিস্থ মুস্তাফাকে সিংহাসন ত্যাগ করতে বললে, সাদরেই সিংহাসন ছেড়ে দেন মুস্তাফা ।
এরপর ওসমানের ছোট ভাই মুরাদ, সত্যিকারের উত্তরাধিকারী সিংহাসনে আসীন হন। জানিসরাসির ও সিপাহি উভয় পক্ষই একযোগে মেনে নেয় নতুন সুলতানকে। ১৬২৩ সালে সুলতান চতুর্থ মুরাদ ইহ্তাস্থুলে প্রবেশ করেন! চৌদ্দ বছর বয়সী বালক, ভারী দেহ সত্তেও, ভালো দেহাবয়ব ও প্রাণবন্ত স্বভাবের সুলতানের আগমনে সবার মাঝে প্রশান্তি নেমে আসে! নতুন করে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে অটোমান সাম্রাজ্য । শক্তিশালী নতুন সুলতানের অধীনে আরো একজন অতীতের গৌরব পুনরুদ্ধারের আশার বীজ রোপিত হয় সবার মাঝে ।
ঠিক এই মুহূর্তে অটোমান সাম্রাজ্যের প্রয়োজন অত্যাচারী সামরিক বাহিনী ও আমলাদের মোকাবেলা করার জন্য এরকমই অত্যাচারী একজন শাসক। আইনের শাসনের প্রতি শ্রদ্ধা ফিরিয়ে আনবেন যিনি। পরিণত বয়সে সম্রাট চতুর্থ মুরাদ এভাবেই নিজের সংক্ষিপ্ত রাজত্বকালের জাদু শক্তির বলে হয়ে উঠেন_-একজন অটোমান হিরো। দরবারের প্রিয়পাত্র ও সচেতন অটোমান লেখক ও ভ্রমণকারী ইভলিয়া চেলেবি’র মতে, “মুরাদ ছিলেন অটোমান সুলতানদের মাঝে সবচেয়ে নিষ্ঠুর ।”
তরুণ সুলতান আয়ুব মসজিদে গিয়ে শাসক হিসেবে ঈশ্বর ও জনগণের কাছে নিজের সার্থকতার জন্য প্রার্থনা করে সেরাগলিওর দিকে অগ্রসর হন। এরপর রীতি অনুযায়ী রাজকোষের দিকে এগিয়ে যান সুলতান। কিন্তু শূন্য রাজখাজানা দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন সুলতান। প্রতিজ্ঞা করে উঠেন, “ইনশাআল্লাহ! হে ঈশ্বর যারা এই রাজকোষ শুন্য করেছে তাদের সম্পত্তির মাধ্যমেই আমি এটি আবার পূর্ণ করে তুলব। আর আরো পঞ্চাশটি রাজকোব সংযুক্ত করব।”
বিদেশি দূতেরাও নতুন করে খণদানে অস্বীকার করে । অথচ পূর্বে এরাই বার্ষিক কর প্রদান করত। যাই হোক সুলতান মুরাদ নিজের সম্পত্তি থেকে ৩,০৪০ ব্যাগ অর্থ জানিসারিসদের মাঝে বন্টন করে দেন। এর পরেও প্রীয় এক দশক কেটে যাওয়ার পর রাজ্যের পরিচালনার ভার নিজের হাতে নেয়ার মতো উপযুক্ত বয়সী হয়ে উঠেন সুলতান মুরাদ । গ্রিক-বংশীয় মাতা কোসেম শক্তসমর্থ ও প্রাণপ্রাচুর্ধে ভরে তোলেন সুলতানকে ।
কিন্তু সৈন্যদের ও দাগ্ুরিক দুরনীতি বন্ধে সফল হতে পারেননি । বিদেশে এশিয়া মাইনর গৃহযুদ্ধ আর বিদ্রোহে ক্ষত-বিক্ষত।পারস্য বাহিনী পুনরায় বাগদাদ ও রিভান দখল করে নিয়েছে । লেবাননে চলছে গোত্রীর় বিদ্রোহ। ক্রিমিয়ার তাতারেরা বিদ্রোহ করে বসেছে। কোজাক বাহিনী কৃষ্ণ সাগরের উপকূল, বসফরাসে অনুপ্রবেশ করে খোদ রাজধানীর জন্য হুমকি হয়ে উঠেছে। এত কিছুর পরেও রাজকর্মচারীদের একটি অংশ বয়সন্ধি থেকে প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়া পর্যন্ত রাজ্য পরিচালনার বিষয়াদি ও ঘটনাক্রম সম্পর্কে প্রয়োজনীয় জ্ঞান ও দৃষ্টি গঠনে সাহায্য করে সুলতানকে।
বলশালী তরুণ সুলতানের ছিল ক্রকুটি আর তয়ংকর দৃষ্টির অভিব্যক্তি। ইভূলিয়ার মতে তিনি ছিলেন “আ্যাথলেটিক, সুগঠিত দেহের অধিকারী । শক্ররা তাকে অসম্ভব ভয় ও শ্রদ্ধা করত ।” সুলতানের শারীরিক শক্তি প্রায় পৌরাণিক গাথার পর্যায়ে পৌছে যায়। বন্দুক থেকে গুলি ছোড়ার চেয়েও দ্রুত তীর ছুড়তে পারতেন সুলতান।
বন্দুকের গুলির চেয়েও বেশি দূরত্ অতিক্রম করা এ তীর চার ইঞ্চি পুরু ধাতুর পাতকেও ফুটো করে ফেলতে পারত। বহুদূরে বর্শা ছোড়াতেও এতটা দক্ষ ছিলেন যে একবার এক মাইল দূরে অবস্থিত মিনারের ওপর বসা দীঁড়কাককে হত্যা করেছিলেন সুলতান। ঘোড়সওয়ার হিসেবেও সুদক্ষ সুলতান পূর্ণ গতিতে ছুটে চলা এক ঘোড়ার ওপর থেকে আরেক ঘোড়ার ওপর লাফ দিতে পারতেন। পেশিশক্তিতে বলীয়ান সুলতান ছিলেন একজন অবিসংবাদিত মুষ্টিযোদ্ধা। “ঠিক মহানবী মোহাম্মদের মতোই।” একবার খেলাচ্ছলে স্বয়ং ইভ্লিয়াকে বন্দির মতো বেঁধে ফেলেন সুলতান ।
ইভ্লিয়ার ভাষায়, “একটা ঈগলের মতোই আমার বেল্ট দিয়ে আমাকে বেঁধে ফেলেন সুলতান । তারপর মাথার ওপর তুলে বাচ্চার মতোই ঘোরাতে থাকেন।” অবশেষে হাসির মাধ্যমে এ খেলার শেষ হয় ও ইভ্লিয়াকে আটচন্লিশটা স্বর্ণ টুকরা উপহার দেন সুলতান। কিন্তু এ ধরনের খেলা শীঘ্রই ভয়ংকর দিকে মোড় নেয়। ১৬৩২ সালে সিপাহিরা একত্রিত হয়ে হিপোড্রোমে বিদ্রোহ করে । তিন দিন ধরে দোকানপাট ও ঘরবাড়ির দরজা-জানালা বন্ধ রাখে সবাই ভয়ে। এ সময়ে সেরাগলিও প্রাসাদের দরজা-জানালাও বন্ধ রাখা হয়।
বিত্রোহীরা এ সময় সতেরোজন নির্দিষ্ট উচ্চপদস্থ কর্মচারীর উদ্দেশ্যে গালমন্দ করতে থাকে । এদের মধ্যে সুলতানের ভগ্নিপতী ও প্রধান উজির হাফিজ পাশা ও প্রধান মুফতির নাম ছিল। দিওয়ানদের সভায় যোগদানের উদ্দেশ্যে আসার সময় পাথর ছুড়ে ঘোড়া থেকে নামতে বাধ্য করা হয় হাফিজ পাশাকে।
বারবারোসলার ভলিউম ৩২ বাংলা সাবটাইটেল উসমান অনলাইন বাংলা