Barbaroslar

বারবারোসলার ভলিউম ২৩ বাংলা সাবটাইটেল – উসমান অনলাইন

ভলিউম দেখতে পোষ্টের নিচে যান

১৫৭৮ সালে মুস্তাফা পাশার নেতৃত্বে অটোমান বাহিনী জর্জিয়ার বৃহৎ
অংশ দখল করে নেয়। এভাবে করে দাখেস্তানে অনুপ্রবেশ করে কাস্পিয়ানের তীরে পৌছে যায়
অটোমান বাহিনী । কিন্তু পারস্য বাহিনী ধীরে ধীরে শক্ত হাতে প্রতিরোধ ব্যবস্থা
গড়ে তুললে এ যুদ্ধ গড়ায় পরবর্তী বারো বছর পর্যস্ত। এরই মাঝে পারস্যের
বিরুদ্ধে কার্জে শক্তিশালী দুর্গ গড়ে তোলে অটোমান বাহিনী ।

কিন্তু জর্জিয়া, আজারবাইজান, তাবরিজ প্রভৃতি দখলীকৃত অঞ্চলসমূহ ধরে
রাখা ছিল কষ্টসাধ্য । এখানকার বেশির ভাগ জনগণ ছিল শিয়া অনুসারী ও এ
উদ্দেশ্যে পারস্যের অনুগত । মোটের ওপর পরোক্ষভাবে শাহর শাসন ও
কেন্দ্রীয়ভাবে সুলতানের শাসন কায়েমে তৎপর হয় অটোমান বাহিনী । কেননা
ইস্তাম্বুল থেকে দূরত্ব বেশি হওয়ায় যাতায়াত ও রসদ পৌছানোতে সমস্যা
ছিল। এ সমস্ত কারণে সোকুলু স্থলপথে এ ধরনের সামরিক অভিযানের
বিরোধি ছিলেন।

ইতিমধ্যে রাজদরবারে সোকুলুর শক্ররা মেতে ওঠে তার বিরুদ্ধে।
প্রথমত, বিভিন্ন অজুহাতে তার কাছের বন্ধুদের মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়। অবশেষে
সোকুলু নিজেও তার প্রাসাদে দরবেশের বেশে আসা আততায়ীর ছুরির আঘাতে
মৃত্যুবরণ করেন।
প্রথম মুরাদকে হত্যার অভিযোগে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে তিনি চিৎকার করে
উত্তর দেন, “ঈশ্বর আমাকেও একইভাবে মৃত্যু দিন।” তাই-ই ঘটে। তার
মৃত্যুতে এক ভেনেশীয় দূত লিখে গেছেন, “মাহমুদ সোকুলুর সাথে তুর্কি
গুণাবলিসমূহ ও সমাধিতে ডুবে গেছে।”

অটোমান সাম্রাজ্য পুরোটাই বিবতিত হয়েছিল সুলতানের সর্বময় কর্তৃত্‌ ও
ক্ষমতার ওপর ভিত্তি করে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে ব্যর্থতাই শেষ পর্যন্ত সাম্রাজ্যের
অভাব, সরকারের দায়িত্‌ ও প্রাতিষ্ঠানিক নীতিসমূহের মাঝে সামঞ্জস্যের অভাব
প্রভৃতি সব কিছুতেই সাম্রাজ্যের বিদায় ঘণ্টা বাজতে থাকে। এর মাধ্যমে কিছু
সময়ের জন্য হলেও এটা স্পষ্ট হয়ে ওঠে যে অটোমান সাম্রাজ্য তার প্রধান যে
লক্ষ্য ইউরোপে সাম্রাজ্য সম্প্রসারণ তা থেকে সরে এসেছে । এর মাধ্যমে
অটোমান তুর্কিরা সম্পদ আহরণের পাশাপাশি বিভিন্ন স্থানে বসতি স্থাপন
করতে পারত। কিন্তু এ সুযোগ কমে আসায় শক্র না পেয়ে নিজেরাই নিজেদের
মাঝে দাঙ্গা বাধিয়ে দেয়। জমির অভাবে শহর অথবা গ্রামাঞ্চলে বিশৃঙ্খলা
ছড়িয়ে পড়ে।

জমি পুনঃসংক্কারের ক্ষেত্রে সুলেমানের উদ্যোগের ভুলসমূহও স্পষ্ট হয়ে
ওঠে। সময়ের সাথে সাথে দেখা দেয় যে, প্রধান জমির বন্টন মূলত
রাজধানীতে কেন্দ্রীভূত হয়ে গেছে। বিভিন্ন জায়গায় তুর্কি অভিযানের অভাবে
কৃষকদের ওপর করের বোঝা চেপে বসে । অন্যদিকে আধুনিক যুদ্ধের ক্ষেত্রে
সিপাহিদের গুরুত্ব কমে যায়। ধীরে ধীরে দেখা যায় যেসব অভিযানে কষ্ট ও
বিপদ আছে, কিন্তু বস্তগত লাভের সম্ভাবনা কম, সেসব অভিযানে সিপাহিরা
আর আগ্রহ পেত না।
ক্ষেত্রে পরিবর্তন আসে। পূর্বে মেধা ও যোগ্যতা অনুযায়ী সুলতানের বাছাই
করা খরিস্টানরাই প্রাসাদের কাজে নিয়োগ পেত। কিন্তু ধীরে ধীর শহরে বেড়ে

উঠা কোনো উচ্চাকাজ্জী মুসলিম প্রভাব খাটিয়ে, ঘৃষ দিয়ে এ পদ পেত। শুধু
তাই নয়, নিজের উত্তরাধিকারীদের দিয়ে যেতে পারত এ পদ!

অটোমান সাম্রাজ্যের ধ্বংসের ক্ষেত্রে এ সমস্ত বিভিন্ন ক্ষেত্রে থেকে আস্তে
আস্তে সামাজিক ও অর্থনৈতিক বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। প্রথমেই ছিল কৃষিজমির
তুলনায় জনসংখ্যা বেড়ে যায়। দ্বিতীয়ত, দাম বেড়ে যায়। সবকিছুর মূল্য বেড়ে
যাওয়ায় অটোমান রৌপ্য মুদ্রার মান কমে মুদ্রান্ষীতি দেখা দেয় ।

অর্থনৈতিক সংকটে পড়ে অটোমান সরকার ১৫৮৪ সালে এর ফুদ্রার
মানকে ইচ্ছামতো কমিয়ে দেয়। স্বর্ণ মুদ্রার মান পথ্থাশ শতাংশ পর্যন্ত
কমে যায়। রৌপ্য কয়েন গলিয়ে ধাতু মিশিয়ে পাতলা এক ধরনের কয়েন
তৈরি করা হয়, যা ছিল (একজন সমসাময়িক তুর্কি ইতিহাসবিদদের
ভাষায়) “আমন্ড গাছের পাতার মতো হালকা ও শিশিরের বিন্দুর মতোই
মূল্যহীন।* সংকট এতটাই গভীর হয়ে ওঠে যে সেনাবাহিনীর বেতন-ভাতা
প্রদানেও সমস্যা দেখা দেয়। ফল বিদ্রোহ, বিশৃঙ্খলা ঠেকানো দায় হয়ে
পড়ে।

ইতিমধ্যে ষোড়শ শতাব্দীজুড়ে সাম্রাজ্যের জনসংখ্যা দ্বিগুণ হয়ে যায়।
ইউরোপে সাম্রাজ্যের আর বিস্তৃতি না ঘটায় উদ্ৃত্ত জনসংখ্যার বসতি স্থাপনে
সমস্যা দেখা দেয়। শুধু সাইপ্রাস বিজয়ের পরু এ ধরনের একটি সম্ভাবনা দেখা
দিলেও আর কোনো উৎস দেখা যায়নি।

বিপুল জনসংখ্যা বৃদ্ধিতে দেখা দেয় বেকার সমস্যা। ফলে গৃহহীন
জমিহীন এসব কৃষকরা দিন দিন ঝুঁকে পড়ে বিভিন্ন অন্যায় কাজে । দেশজুড়ে
দেখা দেয় মূল্যবৃদ্ধি, পণ্যে ভেজাল মেশানো, মুদ্রা জাল করা, ফটকাবাজি, চড়া
সুদের ব্যবসা ও অতিরিক্ত সুদের কারবার |

রাজ খাজানা শূন্য হয়ে পড়ায় বাধ্য হয়ে বিভিন্ন ক্ষেত্রে কর বৃদ্ধির মাধ্যমে
অর্থ সংগ্রহের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। আর এর পুরো বোঝা চেপে বসে
কৃষকদের ওপর । নির্দিষ্ট আয়ের লোকদের মাবে যুদ্রান্ীতির প্রভাব প্রকট হয়ে
পড়ে। এর ফলে বিভিন্ন দপ্তরে সামরিক, নাগরিক যাই হোক না কেন, শুরু হয়
ঘুষ লেনদেন। এছাড়া বিভিন্ন বেআইনি পথে কৃষকদের ওপর অত্যাচার ও
পীড়ন শুরু হয়।

অন্যান্যদের মতো বিচার বিভাগের কর্মীরাও হয়ে পড়ে দূনীতিগ্রস্ত।
সুলতানের বিভিন্ন আদেশকে নিজেদের সুবিধামতো ব্যবহার করত বিচারকরা ।
আবার বেশি অর্থের বিনিময়ে চাকরিপ্রার্থীরা নিয়োগ পেত। এ রকম বিভিন্ন
কাজে কৃষকরা বাধ্য হয়ে অনেক সময় প্রায় পঞ্চশ শতাংশ হারে সুদ নিত।
আর এ অর্থ ফেরত দিতে না পেরে দাসে পরিণত হওয়া ছাড়া আর কোনো
উপায় ছিল না তাদের ।

সামন্তবাদী সিপাহিদের স্থান পূরণে সরকার বাধ্য হয় নিয়মিত
বাহিনীর সংখ্যা বৃদ্ধি করতে । এ কারণে পূর্বের মতো শুধু খ্রিস্টান
বংশোদ্ুতদের দিয়ে জানিসারিস বা সুলতানের নিজস্ব বাহিনী গঠনে
সমস্যা দেখা দেয়। এ কারণে প্রথমবারের মতো মুসলিম প্রজাদের মধ্য
থেকে নিয়োগদান শুরু হয়। এ ধরনের নতুন মিশ্র বাহিনী গঠনে দলগত
সমস্যা দেখা দেয়।

এদিকে আবার জানিসারিসরা ইতিমধ্যে ব্যারাকে সময় না কাটিয়ে
রর কর গোর কারিগর বা করের ফলে
প্রথমবারের মতো ব্যবসায় যুক্ত হয়ে এরা ইস্তাম্বুলের শহুরে শ্রেণীর সাথে
মেশার সুযোগ পায়। আর এভাবে দলীয় শৃঙ্খল ভূলে যুদ্ধের আহহ হারিয়ে
ফেলতে থাকে । এর সাথে আরো যুক্ত হয় সুলেমানের আমল থেকে । তারা
এভাবে উত্তরাধিকারের চিন্তাভাবনায় উদুদ্ধ হয়ে ওঠে । সুলতান চতুর্থ মুরাদের
সময় জানিসারিস ও সুলতানের অন্যান্য গৃহস্থালির কাজে শুধু খ্রিস্টান দাসদের
নিয়োগের প্রথা বাতিল হয়ে যায়।

ষোড়শ শতকের পর থেকে জানিসারিসরা তাদের প্রভু সুলতানের মতোই
দুর্বল হয়ে পড়তে থাকে। ১৫৮৯ সালে সুলতান তৃতীয় মুরাদের সময় ভয়ংকর
সমস্যার উদ্দেগে করে এ বাহিনী । দলে দলে গিয়ে হাজির হয় সেরাগলিও
প্রাসাদে। নিজেদের বেতন-ভাতায় ব্যবহৃত মুদ্রাতে জাল করার জন্য
দিওয়ানের ওপর চড়াও হয় তারা ।

এরপর ১৫৯৩ সালে সুলতানের নিয়মিত প্রহরি অশ্বারোহী বাহিনী বিদ্রোহ
করে। এদের ঠেকাতে গিয়ে জানিসারিসরা আবারো শৃঙ্খলিত হয়। আর
এভাবে দুবাহিনীর মাঝে গড়ে ওঠে শক্রতা। এরকমভাবে সাম ্রাজ্যজুড়ে
জানিসারিস ও সুলতানের বাহিনী দিন দিন বিদ্রোহী হয়ে ওঠে । এমনকি প্রজা
রাজ্য মলদোভিয়াতে জানিসারিসরা নিজেদের পছন্দের প্রার্থীকে নিয়োগদানে
বাধ্য করে। গভর্নর হিসেবে এর প্রধানকেও অবশ্য তারাই পরবর্তীতে স্বার্থ
রক্ষা না হওয়ায় ইস্তাম্ুলে হত্যা-করে !

১৫৯৬ সালের পর আনাতোলিয়াতে আরো জটিল এক সমস্যার উদ্ভব
হয়। জেলালিস নামে নতুন বিদ্রোহী দলের উন্মেষ ঘটে। প্রাদেশিক
সেনাবাহিনী হিসেবে স্কোনরা অস্ত্র বহন করত। জেলালিসদের সাথে এদের
সখ্য গড়ে ওঠে। শান্তির সময়ে কোনো কাজ না থাকায় সেকানরা বেতন পেত
না আর এভাবে ডাকাতি ও রাহাজানিতে মত্ত হয়ে ওঠে এরা ।

সেকান, জেলালিস, তুর্কমান কুর্দি, সিপাহি ও সাজাপ্রাপ্ত ইউরোপীয়
পলাতক সৈন্য সবাই একত্রে মিলে বিদ্বোহী হয়ে ওঠে ।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button