Kurulus Osman

কুরুলুস উসমান ভলিউম ৮৫ বাংলা সাবটাইটেল –

ভলিউম দেখতে পোষ্টের নিচে যান

১৫৭১ সালের অক্টোবর মাসের ৭ তারিখে রবিবারে জাহাজজুড়ে ডন জন
সমবেত প্রার্থনা শেষ করার সাথে সাথে দিগন্তজুড়ে দেখা দেয় তুর্কি জাহাজ
বহর।

যুদ্ধের গঠন দিয়ে সাজানো হয় উভয় দিকে যুদ্ধ জাহাজসমূহকে। প্রথম
দিকে উভয় দিকেই সমস্ত নড়াচড়া বন্ধ হয়ে যায়! একে অন্যকে পরীক্ষা করতে
থাকে উভয় পক্ষ। বৃহৎ কামানের গোলা ছুড়ে দেওয়ার মাধ্যমে যুদ্ধের সূচনা
করে খ্রিস্টান পক্ষ। ক্রমান্বয়ে তিনটি পৃথক বিভাগে বিভক্ত হয়ে যুদ্ধ ছড়িয়ে
পড়ে।

ডান পাশে তুর্কিরা শক্রদেরকে তীরের দিকে নিয়ে যেতে চেষ্টা করে।
প্রতিপক্ষ হিসেবে ভেনেশীয়রা উপকূলেই শক্রদের খতম করতে থাকে। উভয়
পক্ষের কমান্ডারগণও মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।

কিন্তু মধ্যিখানে হতে থাকে প্রধান যুদ্ধ। যেখানে উভয় বাহিনী নিজ নিজ
জাহাজ নিয়ে যুদ্ধ করতে থাকে । লা রিয়েল এবং সুলতানা । দুঘন্টাব্যাপী
ভয়ংকর যুদ্ধ চলে এখানে । কিন্তু দক্ষ গোলান্দাজ বাহিনী থাকায় এ যুদ্ধে
ক্রমান্বয়ে খ্রিস্টান আাডমিরাল জয়ের দিকে এগিয়ে যেতে থাকে । এরপর ডন
জন নিজ বোর্ডিং পার্টি নিয়ে আলী পাশার জাহাজ সুলতানের নেমে যায়। কিন্তু
বীরত্বের সাথে যুদ্ধ করলেও কপালে বুলেটের আঘাতে মৃত্যু হয় আলী পাশার ।
নিজের শক্রকে শ্রদ্ধা করত ডন জন। বর্শার মাথায় করে লা রিয়েল ঝুলিয়ে
দেয়া হয় আলী পাশার ছিন্ন মস্তক।

অটোমান যুদ্ধ পতাকা নামিয়ে ফেলে জাহাজসমূহ দখল করা হয় । তুর্কিরা
পুনরায় তা দখল করতে চাইলেও ব্যর্থ হয়। আরো তিন ঘণ্টাব্যাপী দুর্ধর্ষ যুদ্ধের
পর লেপান্তের যুদ্ধে খ্রিস্টানদের ‘যুদ্ধ জয় নিশ্চিত হয়। প্রায় দুইশ ব্রিশটি
অটোমান যুদ্ধ জাহাজ ডুবিয়ে দেয়া হয় বা দখল করে নেয়া হয়।

বা দিকে যুদ্ধ করা তুর্কিরা অবশ্য আরো একদিন যুদ্ধ করে যায়। উলুজ
আলী দক্ষ নেতৃত্রে মাধ্যমে জিয়ান আন্দ্রে ডোরিয়ার সাথে যুদ্ধ করলেও শেষ
পর্যন্ত খ্িস্টানরাই জয় ছিনিয়ে নেয়, ঘা পরবর্তীতে “ডন কুইস্ষোট” গ্রন্থে স্মরণ
করা হয়।

ব্রিস্টানদের এ জয়ে উল্লাসে ফেটে পড়ে ইউরোপ। পোপ পঞ্চম পিউস
দৈবভাবে ঠিক আলী পাশার মৃত্যু মুহূর্তেই খবর পেলেও পরবর্তীতে দূত মুখে
নিশ্চিত হন।

ভেনিস ও স্পেনও যথাযথ এ উপসংহারে যারপরনাই উচ্ছৃসিত হয়।
পরবর্তী বহু শতান্দীজুড়ে লেপান্তোর এই বীরতৃগাথা নিয়ে রচিত হয় গান,
কবিতা রূপকথা, শব্দমালা ৷

ইউরোপজুড়ে যখন আনন্দের ঢেউ বয়ে যাচ্ছে অটোমান রাজধানী
ইস্তাম্বুলে জুড়ে হতাশা শুরু হয়। তিন দিন পর্যন্ত উপবাস ও নামাজ শেষে
সুলতান সেলিম তীর অধীনে থাকা সব অঞ্চলে ভেনেশীয় ও স্প্যানিয়ার্ডদের
নির্বিচারে হত্যার আদেশ দান করে! এর আগে এত বড় পরাজয় আর দেখেনি
অটোমান তুর্কিরা। কিন্তু সোকুলু দক্ষতার সাথে সুলতানের দৃষ্টিকে সঠিক পথে
পরিচালনা করতে সমর্থ হয়।

এরপর বছরের শেষ দিকে উলুজ আলী, যার নাম পরিবর্তন করে সুলতান
রাখেন কিলিজ; অর্থ তরবারি প্রায় আশিটি জলযান নিয়ে গোল্ডেন হর্নে যাত্রা
করে। পায়েল পাশা এবং সুলতান সেলিম এতে যথেষ্ট সাহায্য করেন। সেলিম

নিজের ফান্ড থেকে অর্থ বরাদ্দসহ রাজপ্রাসাদ সেরাগলিওর বাগানের একাংশে
জাহাজ মেরামতের জায়গা করে দিলে পুরাতনের বদলে নতুন যুদ্ধ জাহাজ
প্রস্তুত হয়। যুদ্ধক্ষেত্র থেকে প্রাণ বেঁচে যাওয়া সৈন্য ও পূর্ব ভূমধ্যসাগরে ছড়িয়ে
থাকা তুর্কি নৌসেনাদের নিয়ে যাত্রা করে কিলিজ।

এভাবে ১৫৭২ সালের বসন্তে পুনরায় সমুদ্রে রাজত্‌ কায়েমের উদ্দেশ্যে
যাত্রা করে অটোমান জাহাজ বহর। জাহাজ নির্মাণ শিল্পে তারা এতটাই উন্নতি
করেছিল, যা এ সময়কার খ্রিস্টান শক্তিসমূহের তুলনায় উন্নত ছিল।

তুর্কি বহর দেখে দমে যাওয়া ভেনেশীয়দের মাঝে আবার অটোমান
অঞ্চলে বাণিজ্য করার সুযোগের আর্জি ওঠে । তাই ভেনেশীয় মন্ত্রী ইস্তাম্বুলে
গিয়ে প্রধান উজিরের কাছে এক ধরনের সমঝোতার প্রস্তাব দিলে সোকুলু উত্তর
দেয় “আমাদের এবং তোমাদের ক্ষতির মাঝে বিস্তর ফারাক রয়েছে।
তোমাদের সাইপ্রাস দখল করে আমরা তোমাদের একটি বাহু কেটে ফেলেছি।
দিয়েছ হয়তো। কেটে ফেলা বাহু আর কখনো নতুন করে হবে না। কিন্ত
কামানো দাড়ি পূর্বের তুলনায় শক্ত হয়ে গজাবে।”

ফ্রান্সের রাজা নবম চার্লসও একই ভাবে শান্তিচুক্তির জন্য আলোচনার ডাক
দিলে অবশ্য সক্রিয় সমর্থন লাভ করে। খ্রিস্টানরা যদিও লেপান্তোর যুদ্ধে
জয়লাভ করেছিল কিন্তু এরপরই তুচ্ছ বিষয় নিয়ে নিজ নিজ বন্দরে ব্যস্ত হয়ে
পড়ে। তার পরেও এ বিজয় মানসিক ও নৈতিকভাবে উচ্চ আসনে বসায়
খ্রিস্টানদের । কনস্টান্টিনোপলের পরাজয়ের পর থেকে পশ্চিমে যে তুর্কি জুজু
ভর করেছিল, তা ভেঙে চুরমার হয়ে যায়।

তুর্কিদের সম্মানের ক্ষেত্রে এটি একটি নতুন মোড় ছিল। কিন্তু সুলেমানের
সাম্রাজ্যের শক্তি তখন পর্যন্ত পূর্বের মতো উচ্চতাতেই ছিল। সোকুলুর নেতৃত্ে
একই ভাবে কেটে যায় আর বিশটি বছর।

সাম্রাজ্যের প্রধান শত্রু স্পেন। উভয়ের মাঝে গলার কাটাস্বরাপ অবস্থান
তিউনিসের। ডন জনের নেতৃতে তুর্কিরা লেপান্তোর যুদ্ধের পর পরই তিউনিস
ও হারায়। এর পরের বছরই কিলিজ আলী লেপান্তোর চেয়েও বহুগুণ বেশি
শক্তি নিয়ে ফিরে আসেন। পরিপূর্ণভাবে চিরদিনের মতো অধিকার করে
তিউনিস। এর সাথে লা গোলেটা দুর্গ, যা স্পেনের অধীনে ছিল বহুকাল ধরে ।

১৫৭৮ সালে মরকোতেও তুর্কি প্রভাব প্রতিষ্ঠিত হয়। এখানে পর্তুগিজদের
বিরুদ্ধে তুর্কি সাহায্য কামনা করে ফোজের শরীক। তুর্কিরা খুশি মনেই এ সাহায্য
করে। ফলাফলে পর্তুগালের বিপক্ষে বৃহৎ একটি’যুদ্ধেও জয়লাভ করে তুর্কিরা।

তিউনিস দখলের কিছুদিন পার হতে না হতেই মারা যান সুলতান
সেলিম। কুসংস্কারে বিশ্বাসী সেলিম নিজের শেষ দেখতে পেয়েছিলেন

ধূমকেতুর আবির্ভাবে, কনস্টান্টিনোপলে ভয়ংকর ভূমিকম্পে, মক্কার পবিত্র
ভূমিতে বন্যায় আর সবকিছুর ওপর সেরাগলিও প্রাসাদের রান্নাঘরে আগুন
লেগে যায়। যার ফলে ওয়াইনের ভাড়ার ঘর পুড়ে যায়। চিন্তিত সুলতান তুর্কি
স্্রানঘরে ভ্রমণ করতে যান পুরো এক বোতল সাইপ্রাস ওয়াইন পান করে।
স্ানঘরের নির্মাণকাজ মাত্রই শেষ হয়েছিল। তখনো ভালো করে শুকায়ওনি।
মদ্যপ সুলতান মেঝেতে পড়ে গিয়ে মাথা ফাটিয়ে জুরে আক্রান্ত হন। এভাবে
তুর্কি সুলতানের জীবনাবসান হয় ।

সেলিমের রাজত্বকাল কোনো সুফল বয়ে আনেনি। কিন্তু তার মৃত্যুও
হয়েছে অসময়ে । মাহমুদ সোকুলু সেলিমের পুত্র তৃতীয় মুরাদের অভিষেক
নিশ্চিত করে। কিন্ত মুরাদ সোকুলুর ক্ষমতাকে কর্তন করে আর এভাবে
শান্তিপূর্ণ হয়।

ইস্তাম্বুলে পৌছে দীর্ঘ সমুদ্রযাত্রায় ক্লান্ত ম্যাগনেসিয়ার গভর্নর মুরাদ
প্রথমেই নির্দেশ দেন নিজের পীচ ভাইকে হত্যা করার। মুরাদ তার পিতার
মতো ওয়াইন আসক্ত ছিল না। ওপরন্ত সুলতান হিসেবে তীর জারীকৃত প্রথম
ফরমান ছিল ওয়াইন পানের বিরুদ্ধে। একশ্রেণীর জানিসারিস এ ঘোষণার
বিদ্রোহ করলে পুনরায় তাদেরকে ওয়াইন পানের অনুমতি দেয়া হয়। কিন্তু
কোনো প্রকার ভায়োলেন্স সৃষ্টির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি বহাল থাকে ।

মুরাদের নিজম্ব কিছু বদভ্যাস ছিল। ধনলিন্সা ও কামুকতা ছিল এদের
মধ্যে বিশেষ দুটি । উন্মাদের মতোই নারী ও স্বর্ণন্রীতি ছিল তাঁর । সুলেমানের
মৃত্যুর পর থেকে রাজ্যের ধন-সম্পদ সপ্তম টাওয়ারে থাকত। এ দুর্গের একটি
টাওয়ারে ছিল স্বর্ণ, আরেকটিতে রুপা, তৃতীয়টিতে স্বর্ণ ও রৌপ্য নির্মিত গ্রেট,
মণি-মুক্তা, চতুর্থটিতে মূল্যবান প্রাচীন জিনিসের সংগ্রহ, পঞ্চমটিতে পারস্য ও
মিশর থেকে আনা প্রাটীন দ্রব্য, ষষ্ঠটি ছিল অস্ত্রাগার ও সপুমটি পূর্ণ ছিল রাষ্ট্রীয়
কাগজাদিতে। দ্বিতীয় সেলিম নিজস্ব খাজানাতে প্রায় সব সরিয়ে ফেলায় সপ্তম
টাওয়ার মূলত কারাগার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

কিন্তু তৃতীয় মুরাদ তার থেকে আরো এক ধাপে এগিয়ে তিনটি তালা
সংযোগে গঠিত বিশেষ ভল্ট তৈরি করান সম্পদ রক্ষার্থে। আর নিজের পুরো
রাজতৃকালজুড়ে এর ওপর নিদ্রা যেতেন। বছরে মাত্র চারবার নতুন সম্পদ
রাখার জন্যই এ তালাসমূহ খোলা হতো।

মুরাদ নিজের চারপাশে রাখতেন অসংখ্য তোষামোদকারী। আর
সাম্রাজ্যের চার স্তত্তের ন্যায় চার নারী মুরাদের সমগ্র জীবন শাসন করে । প্রথম
জন ছিলেন তীর মা। দ্বিতীয় জন ছিলেন তার ভগিনী, সোকুলুর স্ত্রী। আরেক
জন ছিলেন একজন ভেনেশীয় নারী ও সুলতানের বড় পুত্র মাহমুদের মাতা,

সাফিয়ে। সাফিয়ের আকর্ষণ থেকে সুলতানের মনোযোগ হটাতে তীর মা এক
রাতে দুতিনজন রমণী উপভোগের অনুমতি দান করেন সুলতানকে। এর ফলে
দেখা যায় ইস্তাম্বুলের দাস মার্কেটে যুবতী মেয়েদের দাম বেড়ে যায়।

চতুর্থ গুরুতৃপূর্ণ নারী হিসেবে ভূমিকা পালন করে জানা ফিদা । এ নারীক
সুলতানের মা মৃত্যুকালে হারেমের প্রধান নির্বাচন করে যায়। আর যেহেতু
সুলতানের মা নিজে তার সাথে বিছানায় যেতে পারত না তাই সমষ্টিগতভাবে
অন্যদের দিয়ে রাজ্যের ব্যাপারে সুলতানের ওপর প্রভাব খাটানোর চেষ্টা চালাত
তারা । কিন্তু তারপরেও সাফিয়ের প্রভাব ছিল সবচেয়ে বেশি । সুলতানের ওপর
নিজস্ব প্রভাব খাটিয়ে সেন্ট মার্ক আক্রমণ প্রতিহত করা, ভেনিসের জন্য বিভিন্ন
বাণিজ্যিক সুবিধাদি আদায় করে দেয় সাফিয়ে ।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button