উসমান অনলাইন কুরুলুস উসমান ভলিউম ১০১ বাংলা সাবটাইটেল
অনুবাদ মিডিয়া কুরুলুস উসমান ভলিউম ১০১ বাংলা সাবটাইটেল
কুরুলুস উসমান ভলিউম ১০০ বাংলা সাবটাইটেল দেখুন পোষ্টের নিচে।
অটোমানরা ইউরোপ বিস্তার করেছিল কিভাবে জেনে নিন..।
ইউরোপ থেকে তুর্কি তাড়ানোর এই লড়াইয়ে প্রথম যিনি ময়দানে নামলেন, তিনি হলেন সার্বিয়ার লাজার ডুকাসিন। প্রায় ত্রিশ হাজার যোদ্ধার শক্তিশালী এক বাহিনী নিয়ে তিনি রওনা দিলেন অ্যাড্রিয়ানোপলের দিকে। দুই সপ্তাহ মার্চ করে বিনা বাধায় তিনি পৌঁছে গেলেন অ্যাড্রিয়ানোপলের মাত্র পনেরো কিলোমিটারের ভেতর।
অ্যাড্রিয়ানোপল জয় করে বলকান থেকে এশিয়ায় ঢোকার দুটো পথের একটাকে স্থায়ীভাবে বন্ধ করে দিয়েছিলেন মুরাদ। ভুকাসিন যখন অ্যাড্রিয়ানোপলের দোরগোড়ায় এসে হাজির হলেন, মুরাদ তখন বাইজান্টাইনদের সঙ্গে লড়াই করতে ব্যস্ত থ্রেসের দক্ষিণে।
অটোমানদের সেরা কমান্ডার লালা শাহিন পাশা সেনাবাহিনীর আরেকটা বড়ো অংশ নিয়ে তখন এশিয়া মাইনরে ছিলেন। সার্বদের গতিবিধির খবরাখবর জানতে পেরে তিনি মাত্র দশ হাজার যোদ্ধা দিয়ে হাজি ইলবেকে অ্যাড্রিয়ানোপলের দিকে রওনা করিয়ে দিলেন।
হাজি ইলবে যখন ক্রুসেডার ক্যাম্পের কাছে পৌঁছলেন, তখন রাত নেমে এসেছে।তার স্কাউটরা খবর নিয়ে এলো, অ্যাড্রিয়ানোপল দখল উপলক্ষ্যে ক্রুসেডার ক্যাম্পে চলছে আগাম উৎসব। প্রচুর ভেড়া আর মুরগি জবাই করে, গলা পর্যন্ত মদ খেয়ে সারা রাত উৎসবের পর কাল সকালে শহর দখলের জন্য রওনা হবে ক্রুসেডাররা।
রাত বেশি গভীর হওয়ার আগেই একটা একটা করে ক্যাম্পের সব বাতি নিভিয়ে দেওয়া হলো। ক্যাম্পের গার্ডরা এবার ফুর্তিতে মেতে উঠল নিঃশব্দে। এতক্ষণ এরা সুযোগ পায়নি।ওদিকে নিঃশব্দে নদী পেরিয়ে এসেছে স্বয়ং মৃত্যু। মারিজা নদীর স্রোতও তার কাছে ক্ষীণ মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যেই সাত হাজার আকিনজি অশ্বারোহী হাজি ইলবের নেতৃত্বে মারিঙ্গা নদী পেরিয়ে ক্যাম্পের দুদিকে পজিশন নিল। শুধু নদীর পাড়টা খোলা রেখে উত্তর আর দক্ষিণ দিক আটকে দিলো তার বাহিনী। পেছনে আরও তিন হাজার আজব যোদ্ধা, দুর্দান্ত তিরন্দাজ এরা।
শিকারি বেড়ালের মতো নিঃশব্দে মাত্র একশো মিটারের ভেতর চলে এলো তুর্কি বাহিনী। এবার হাজি আদেশ দিলেন প্রত্যেকের ঘোড়ার দুপাশে দুটো করে মশাল জ্বালিয়ে দিতে। মশাল জ্বালানো শেষ হওয়ার সাথে সাথে ইলবে হুংকার দিয়ে ওঠলেন, ‘হাইদির আল্লাহ!!’
ক্ষুধার্ত সিংহের মতো অটোমান গাজিরা ঝাঁপিয়ে পড়ল ক্রুসেডারদের ওপর। তাদের মাত্র একবার সংকেত দেওয়া হয়েছিল জেগে ওঠার জন্য। কারণ, ঘুমন্ত শত্রুকে হত্যা করা কাপুরুষতা। হকচকিয়ে যাওয়া ক্রুসেডাররা ঘুম ভাঙার পর একটা মাত্র শব্দই শুনতে পেল, ‘পালাও!’
দুদিক থেকে সাত হাজার গাজি তাড়া করল তাদের। এক দিকে তিরবৃষ্টি, অন্য দিকে ঘোড়সওয়ারদের বিদ্যুৎগতি হামলা, সঙ্গে মাতলামি, দশ হাজার ঘোড়ার সঙ্গে বাঁধা বিশ হাজার মশালকে মাতালেরা দেখছিল চল্লিশ হাজার। তাদের চোখ ধাঁধিয়ে গিয়েছিল পুরোপুরি, একের পর এক তিরের আঘাতে লাশের স্তূপ পড়তে লাগল মারিজা নদীতে।
ক্রুসেডারদের কয়েক হাজার সাফ হয়ে গেল এক ধাক্কায়। বাকিরা ভাবল সুলতান মুরাদ সম্ভবত বিশাল কোনো বাহিনী নিয়ে তাদের ওপর হামলা করেছেন। যে যেদিকে পারল পালিয়ে বাঁচল। বেঁচে গেল অ্যাড্রিয়ানোপল
এই যুদ্ধকে ইতিহাসে ফার্স্ট ব্যাটল অফ মারিজা বলা হয়। তুর্কি ঐতিহাসিকরা একে বলেন সার্ব সিন্দিব, মানে সার্বদের ধ্বংস। এই যুদ্ধের ফলে বলকানে ক্রমেই একটা কুসংস্কার জন্ম নিতে শুরু করল। তুর্কিদের খালি চোখে দেখা যায় না, ওরা ভয়ংকর। ওদের গায়ে তির মারলে লাগে না, ওদের তির লোহার বর্মকেও ভেদ করে ঢুকে যায় বুকের ভেতর।
একান থেকে ওকান হয়ে লোকের মুখে শোনা নানা বাড়াবাড়ি রকম গুজবের মাধ্যমে জন্ম নিতে থাকল ইতিহাস কুখ্যাত স্টেরিওটাইপ দ্যা টেরিবল তুর্ক। পোপ আর বাইজান্টাইন কাইজারের কূটনীতি বৃথা গেল না। কাইজারের চাচাতো ভাই ছিলেন স্যাভয়ের কাউন্ট এমেদিয়াস। এমেদিয়সের নেতৃত্বে স্যাভয়, জেনোয়া, ফ্লোরেন্স, হাঙ্গেরি আর বুলগেরিয়া মিলে শক্তিশালী অটোমানবিরোধী ক্রুসেডার জোট গঠন করল। কিছুদিনের মধ্যেই এতে যোগ দিলো সাইপ্রাস এবং রোডস দ্বীপের নাইটস হসপিটালাররা। পোপ পঞ্চম আরবান দীর্ঘদিন পর আশায় বুক বাঁধলেন, আবার শুরু হতে যাচ্ছে ক্রুসেড ।
এই ক্রুসেডের লক্ষ্য ছিল দুটো। প্রথম লক্ষ্য ছিল তুর্কিদের ইউরোপ থেকে বের করে দেওয়া। দ্বিতীয় লক্ষ্য ছিল মিসরের আলেকজান্দ্রিয়াতে আঘাত হেনে আলেকজান্দ্রিয়া বন্দরটিকে ধ্বংস করে দেওয়া। ক্রুসেডে সাহায্যের বিনিময়ে পোপ বাইজান্টাইন কাইজার জন পালাইলোগাসের কাছ থেকে প্রতিশ্রুতি নিয়েছিলেন যে, ক্রুসেড শেষে তিনি নিজের অর্থডক্স চার্চ ছেড়ে রোমান ক্যাথলিক চার্চে যোগ দেবেন।
গুড ফ্রাইডের দিন পোপ নিজের হাতে পবিত্র ক্রুশ স্যাভয়ের কাউন্ট এমেদিয়াস এবং সাইপ্রাসের পিটার দ্যা গ্রেটের পোশাকে সেলাই করে দিলেন। বিপুল উৎসাহে শুরু হলো ক্রুসেডের প্রস্তুতি। পোপ পাপাল বুল জারি করে ঘোষণা করলেন, চার্চ তার মোট বাৎসরিক আয়ের দশ শতাংশ ক্রুসেডের খরচ হিসেবে এমেনিয়াসকে দান করবে। দ্বিমুখী অভিযান শুরু হলো।
মুরাদের পক্ষে এই বিশাল সেনাবাহিনীকে থামানো সম্ভব ছিল না। জেনোয়া আর ভেনিস দার্দানেলস প্রণালি দিয়ে অটোমানদের আটকাতে নিজেদের নৌবহর নামিয়ে দিবে জানতে পেরে নিরূপায় মুরাদ ইউরোপে থাকা তুর্কিদের দ্রুত আনাতোলিয়ায় পিছ হটার নির্দেশ দিলেন।
ক্রুসেডার বাহিনী ১৩৬৬ সালে এসে পড়ল গাল্লিপলিতে। ছোটোখাটো কিছু সংঘ শেষে শহর থেকে বেরিয়ে গেল তুর্কি বাহিনী। অটোমানরা এই প্রথমবারের মতে ইউরোপের মাটি থেকে পিছু হটল । এক মাঘে শীত যায় না। বলকান অঞ্চলের রাজনীতি সব সময়েই ছিল অস্থির।
স্যাভয়ের কাউন্ট এমেদিয়াস যখন গালিপলি জয়ে ব্যস্ত, তখন বাইজান্টাইন কাইজা বুলগেরিয়ার জারের সঙ্গে সমঝোতা করতে গিয়েছিলেন। তার উদ্দেশ্য ছিল ক্রুসেড জোটকে আরও শক্তিশালী করা। কিন্তু বুলগেরিয়ার জার তার প্রস্তাবে তো গুরু দিলেনই না বরঞ্চ তাকে বন্দি করলেন।
চাচাতো ভাই কাইজারের বন্দি হওয়ার খবর পেয়ে ক্রুদ্ধ হয়ে এমেদিয়াস বুলগেরিয়া আক্রমণ করে বসলেন। বুলগেরিয়ার বিপুল পরিমাণ অঞ্চল মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিয়ে তিনি বুলগেরিয়ার জারকে হুমকি দিলেন। বললেন, জনকে ফেরত না দিলে তার রাজধানী আক্রমণ করা হবে। বাধ্য হয়ে জার জন পালাইলোগাসকে ফিরিয়ে দিতে বাধ্য হলেন।
ক্রুসেডের মূল ঝড়টা গেল অর্থডক্স খ্রিষ্টানদের ওপর দিয়ে। শীত এসে পড়ায় এমেদিয়াস নিজের বাহিনী নিয়ে ফিরে গেলেন স্যাভয়ে। কাইজার বুঝতে পারলেন, নিজের সিংহাসন রক্ষা করতে হলে তাকে অবশ্যই পোপের সঙ্গে সমঝোতায় বসতে হবে।
‘অটোমানরা শত্রু। কিন্তু গির্জা নিয়ে বিবাদকারী ল্যাটিনরা শত্রুর চেয়েও খারাপ। পোপ যেমন রোমান ক্যাথলিক খ্রিষ্টানদের ধর্মগুরু, ঠিক তেমনি অর্থডক্স খ্রিষ্টানদের ধর্মগুরু হলেন প্যাট্রিয়ার্ক। তখনো ইউরোপে প্রোটেস্ট্যান্ট চার্চের জন্ম হয়নি। গ্রিক অর্থডক্স চার্চ আর ক্যাথলিক চার্চের মধ্যে চলছিল তীব্র বিরোধ। ক্রুসেডে নেতৃত্ব দিয়েছিল ক্যাথলিকরা। আর অর্থডক্সরা ছিল অপেক্ষাকৃত নমনীয়।
অর্থডক্স চার্চের রাজনৈতিক নেতা ছিলেন বাইজান্টাইন সম্রাট কিন্তু অটোমানদের উত্থানের যুগে দুর্বল হয়ে পড়েছিল রোমান বাইজান্টাইন সাম্রাজ্য। যে সাম্রাজ্য এক দিন পশ্চিমে ক্রোয়েশিয়া থেকে পূর্বে আর্মেনিয়া, উত্তরে রাশিয়া থেকে দক্ষিণে ইথিওপিয়া পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল, তার সীমানা সংকুচিত হতে হতে চলে এসেছিল কনস্ট্যান্টিনোপল, থ্রেস, মোরিয়া উপদ্বীপ, আর ক্রিট দ্বীপপুঞ্জ পর্যন্ত।
অস্তিত্ব সংকটে ভোগা সাম্রাজ্যকে রক্ষা করতে হাঙ্গেরির লুইস দ্যা গ্রেটের কাছে গেলেন কাইজার, লুইস তার সাহায্যের জন্য পাঠালেন দুজন ঘোড়সওয়ার । কাইজার বুঝলেন তার দুর্বলতা নিয়ে নির্মম রসিকতা করছেন ক্যাথলিক সম্রাটরা।
এরপর তিনি ইতালি সফরে গিয়ে ভেনিস, জেনোয়া, মিলান, ফ্লোরেন্সের প্রতিটি নগর রাষ্ট্রের কাছে সাহায্যের আবেদন জানালেন। কেউ সাহায্য করল না। শেষতক জন ঠিক করলেন, তিনি অর্থডক্স খ্রিষ্টান থেকে ক্যাথলিক হয়ে যাবেন। অন্তত তখনই পোপ তাকে বাঁচাতে ক্রুসেডের ডাক দিতে সম্মত হবেন।
কিন্তু তার এই প্রচেষ্টা তীব্র প্রতিরোধের সম্মুখীন হলো বাইজান্টাইন সাম্রাজ্যের জনগণের কাছে। বিদ্রোহের ভয়ে ক্যাথলিক হওয়ার ঘোষণা দেওয়ার সাহস পেলেন না কাইজার।
এরই মধ্যে ১৩৭১ সালে আবার মাথা তুলে দাঁড়াল সার্বিয়া কিং ভুসকাসিন আর তার ভাই বসনিয়ান লর্ড উগলেজা আবারও বিশাল এক বাহিনী নিয়ে বলকান উপদ্বীপের বুক চিরে এগিয়ে চললেন। লক্ষ্য ইউরোপ থেকে অটোমানদের নাম নিশানা মুছে দেওয়া।
২৭ সেপ্টেম্বর, ১৩৭১।
গভীর রাত। অ্যাড্রিয়ানোপলের কাছের বন শরতের রাতে কুয়াশায় ভিজে আছে। কাছের পাহাড় থেকে আসছে মৃদু শীতল হাওয়া। সেই হাওয়ায় ভেড়ার লোমের কম্বল গায়ে চড়িয়ে ঘুমোতে বেশ লাগে।
মারিঙ্গা নদীর তীর ঘেঁষেই রাজা ভুকামিনের শিবির। ভুকাসিন, প্রিন্স মার্কো আর ডেস্পট উগলেসা মিলে গোটা বলকানের শক্তি নিয়ে হাজির হয়েছেন এখানে। পথে তারা কোনো বাধা পাননি। অটোমানরা কোথায় যেন হাওয়া হয়ে গেছে। ভুকাসিন ধারণা করেছিলেন, সুলতান মুরাদ তার রাজধানী রক্ষায় এগিয়ে আসতে বাধ্য হবেন। কিন্তু মুরাদ তখন ব্যস্ত এশিয়া মাইনরে
ঠিক সাত বছর আগের মতোই অবস্থা। কিন্তু এবার ডুকাসিনের মোট সৈন্যসংখ্যা সেবারের প্রায় দ্বিগুণ, ষাট থেকে সত্তর হাজারের মধ্যে। এবার ডুকাসিন আরও সতর্ক। নিজের গোয়েন্দাদের তিনি চারদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে
রেখেছিলেন, পাছে অটোমানরা আবারও গতবারের মতো কোনো অ্যামবুশ করে। গোয়েন্দাদের দেওয়া খবর অনুযায়ী সব ঠিকঠাকই ছিল। আশেপাশে বহুদূর পর্যন্ত নেই। কোনো অটোমান বের অস্তিত্ব। সুলতান মুরাদ খুব শিগগিরই ফিরে আসবেন এমন কোনো সম্ভাবনা নেই। নির্বিবাদে অ্যাড্রিয়ানোপল দখল এবার সুনিশ্চিত।
সাত বছর আগের মতোই, আবারও ভোজ উৎসবের আদেশ দিলেন ডুকাসিন। পেট পুরে খেয়ে আর গলা পর্যন্ত মদপান করে তার বাহিনীর ক্রুসেডাররা ঝাঁপিয়ে পড়ল বাহিনীর সঙ্গে নিয়ে আসা বেশ্যাদের ওপর। উদ্দাম কামলীলা চলার পর ক্লান্ত হয়ে এলো পুরো ক্যাম্প।
রাত বাড়ার পর তারা ঢুকে গেল কম্বলের নিচে। মৃদু ঠান্ডা রাতে ক্লান্ত, মাতাল ক্রুসেডারদের চোখে যখন রাজ্যের ঘুম, তখন ঘোড়ায় চাবুক কষে তাদের দিকে এগিয়ে আসছে নীরব মৃত্যুদূত।
লালা শাহিন পাশা আর গাজি এড্রেনোস, দুই ঠান্ডা মাথার শিকারি সঙ্গে মাত্র আটশো অভিজ্ঞ গাজিকে নিয়ে রওনা হয়ে গেছেন ডুকাসিনের ক্যাম্পের দিকে।
শাহিন পাশা অথবা এড্রেনোস কেউই এখানে যুদ্ধ জয়ের আশা নিয়ে আসেননি। স্বাভাবিক বিচার বুদ্ধিতে সত্তর হাজারের সঙ্গে আটশো যোদ্ধা নিয়ে লড়াই করার কোনো মানে হয় না।
কিন্তু তারা আসলে লড়াই জিততে আসেননি। তারা এসেছেন খুন করতে এবং খুন হতে। পোড় খাওয়া এই দুই অভিজ্ঞ গাজি ভালো করেই জানেন, এই লড়াইয়ে জেতার কোনো সম্ভাবনা নেই। অ্যাড্রিয়ানোপল রক্ষা করার কোনো উপায়ও যেহেতু নেই, তাই তারা সিদ্ধান্ত নিলেন, যত বেশি সংখ্যক শত্রুর প্রাণহানি ঘটিয়ে নিজেরা শহিদ হবেন।
এতে করে তাদের শাহাদাতের পর সুলতান মুরাদ যখন আনাতোলিয়া থেকে ফিরবেন তখন তার পক্ষে লড়াই করা সহজ হবে। জীবন বাজি ধরে রওনা হয়ে গেলেন, সঙ্গে তারা দুজন নিলেন বাছা বাছা আটশো গাজিকে ২৭ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় এড্রেনোস আর শাহিন পাশাসহ বাহিনীর সবাই মাথায় যার যার কাফন বেঁধে নিলেন। তারপর রাতের চাদরে গা ঢাকা দিয়ে রওনা হয়ে গেলেন শত্রু শিবিরের দিকে।
ভুকাসিনের শিবির থেকে বেশ কিছুটা দূরের এক বনে তারা মিলিত হলেন ডুকাসিনের ক্যাম্পের ভেতর লুকিয়ে থাকা নিজেদের গোয়েন্দাদের সঙ্গে। এক সংক্ষিপ্ত বৈঠকের পর সিদ্ধান্ত হলো, মাঝরাতে দুই ভাগে ভাগ হয়ে আটশো গাজি দুই দিক থেকে চারজনের ছোটো ছোটো মোট দুইশো দলে ভাগ হয়ে শিবিরে ঢুকে পড়বে। তাঁবুতে ঢোকার আগ পর্যন্ত কোনোরকম আওয়াজ করা যাবে না। তাঁবুতে ঢোকার পর একবার মাত্র আওয়াজ করে শত্রুকে জাগিয়ে সাথে সাথে হত্যা করতে হবে। তাঁবুর সবাইকে হত্যা না করা পর্যন্ত কোনো তাঁবু থেকে বের হওয়া যাবে না।
তারপর নিঃশব্দে বনের ভেতর গুঁড়ি মেরে চলতে শুরু করলেন তারা। ঘোড়াগুলোকেও যথাসম্ভব নিঃশব্দে হাটিয়ে নিয়ে রাতের দ্বিতীয় প্রহরে তারা হাজির হলেন ক্রুসেডার শিবিরের কাছেই। সেখান থেকে চারজনের ছোটো ছোটো দলে ভাগ হয়ে ছড়িয়ে পড়লেন পুরো শিবিরে। ক্রুসেডাররা তখন ঘুমে বিভোর। শুরু হলো এক নির্মম হত্যাযজ্ঞ।
যে তাঁবুতেই অটোমানরা ঢুকছিল সে তাঁবুই পরিণত হচ্ছিল কবরস্থানে। মাত্র দুঘণ্টার মধ্যে প্রায় নিঃশব্দে অটোমানরা হত্যা করেছিল অন্তত বিশ হাজার ক্রুসেডারকে। এরপর তারা যা পেয়ে গেল তা তারা কল্পনাতেও আনেনি। তুকাসিন আর উপলেজার তাঁবু।
শাহিন পাশা ডেস্পট উগলেসার তাঁবুতে ঢুকতে গেলে উপলেসার দেহরক্ষীরা কঠোরভাবে বাধা দিলো। পাশা ও তার সঙ্গীরা বিন্দুমাত্র ইতস্তত না করে দুর্দান্ত বেগে তলোয়ার চালিয়ে টুকরো টুকরো করে ফেললেন তাদের সবাইকে। তারপর তাঁবুতে ঢুকে হত্যা করলেন উগলেসাকে। ওদিকে এড্রেনোস গাজি ঢুকলেন ভুকাসিনের তাঁবুতে, কিছুক্ষণ পর সেখান থেকে ভেসে এলো ‘হাইদির আল্লাহ ধ্বনি।
শাহিন পাশা বুঝলেন, কিং ভুকাসিন শেষ।
ভুকাসিন আর উগলেসাকে মারতে গিয়ে যে শোরগোল হয়েছিল তাতে শিবিরের যারা তখনো জীবিত ছিল, তারা জেগে ওঠল। শিবিরের অর্ধেক যোদ্ধা নিহত, নিহত রাজা ডুকাসিন। এই অবস্থায় তাদের মাথার আকাশ ভেঙে পড়ল শাহাদাতের নেশায় পাগল এড্রেনোস আর শাহিন পাশা ইয়া আল্লাহ, বিসমিল্লাহ, আল্লাহু আকবার!’ রব হেকে আবার ঝাঁপিয়ে পড়লেন তাদের উপর এক অদ্ভুত আতঙ্ক ছেকে ধরল ক্রুসেডারদের। যে যেদিক পারল ছুটে পালাতে চাইল।
কিন্তু গাজিদের তলোয়ারের ধারে রক্তে ভেসে গেল গোটা শিবির। শাহিন পাশা আর এড্রেনোস আটশো যোদ্ধা নিয়ে এসেছিলেন শহিদ হতে কিন্তু তার বদলে তারা ধ্বসিয়ে দিলেন সত্তর হাজারের এক সেনাবাহিনীকে। ব্যাটল অফ মারিজা পৃথিবীর ইতিহাসের সেরা গেরিলা আক্রমণগুলোর একটা। 1 এই লড়াইয়ের ফলে সার্বিয়ান সাম্রাজ্যের পতন ঘনিয়ে আসে। অটোমানদের সামনে উন্মুক্ত হয়ে পড়ে গোটা বলকান।
কুরুলুস উসমান ভলিউম ১০০ বাংলা সাবটাইটেল
Watch on Google Drive https://drive.google.com/file/d/1bfBUwUxbgZpWQP06jyz2Zh-NMWkUPbmi/view?pli=1