আল্প আরসালান সেলজুক ভলিউম ১৬ বাংলা সাবটাইটেল – উসমান অনলাইন
ভলিউম দেখতে পোষ্টের নিচে যান
তবে মৃত্যুর আগে সালতানাতে তার দুই পুত্র সেলিম অথবা বায়েজীদ যে কোনো
একজনের অভিষেক নিশ্চিত করে যান।.ছোট পুত্র জাহাঙ্গীরের মৃত্যু হয়।
সেলিম ও বায়েজীদ, একে অন্যকে অসম্ভব ঘৃণা করতেন। তাই পিতা
সুলেমান সাম্রাজ্যের দুই অংশে দুজনকে পৃথক কাজের ভার দেন। কিন্তু কয়েক
বছরেই মধ্যে দুই ভাইয়ের মাঝে গৃহযুদ্ধ বেধে যায়। পিতার বাহিনীর সাহায্য
নিয়ে সেলিম ১৫৫৯ সালে বায়েজীদকে কন্যার কাছে পরাজিত করেন।
এরপর বায়েজীদ তার চার পুত্র ও ছোট কিন্তু শক্তিশীলী ও দক্ষ একদল
সৈনিক নিয়ে পারস্যের থামাসে শাহর অধীনে আশ্রয় গ্রহণ করে ।
কিন্তু প্রথম দিকে পারস্পরিক উপটৌকনের বিনিময়ে বায়েজীদকে আশ্রয়
দিলেও পরবর্তীতে অটোমান সেনাবাহিনীর সাথে আপোস করতে বাধ্য হয়
শাহ। বিপুল পরিমাণ স্বর্ণের বিনিময়ে বায়েজীদকে ইস্তাম্থল থেকে আগত
পেশাদার হত্যাকারীর হাতে তুলে দেয়া হয়।
এরপর বায়েজীদের চার পুত্র ও বার্সাতে থেকে যাওয়া পঞ্চম শিশুপুত্রও
পিতার মতো একই ভাগ্য বরণ করে।
এভাবে সেলিমের পথে সিংহাসন বসার সমস্ত বাধা দূর হয়। একই সাথে
অটোমান সাম্রাজ্যের পতনের ঘণ্টাও বেজে ওঠে ।
পূর্ব দিকে সুলতান সুলেমানের বিজয় অভিযানসমূহের মাধ্যমে ভূমধ্যসাগর
পর্যন্ত অটোমান সাম্রাজ্যের বিস্তৃতি ঘটে । ১৫৩৮ সালে বারবারোসার নেতৃতে
অটোমান বাহিনী যখন পঞ্চম চার্লসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে সে সময় সুয়েজ
থেকে লোহিত সাগর পর্যন্ত মিশরের পাশা সুলেমানের নেতৃত্বে আরো একটি
অটোমান জাহাজ বহর যাত্রা শুরু করে ভারত মহাসাগরের উদ্দেশে । এ অঞ্চলে
পতুর্ণিজ বণিকরা ভয়ংকর রকম আধিপত্য বিরাজ করেছিল ।
গুজরাতের মুসলিম শাসক বাহাদুর শাহ্ ও মোঘল সম্রাট হুমায়ুন উভয়
পক্ষই পতুর্ণিজ বিতাড়নে চিন্তিত হয়ে উঠেন।
সুলতান সুলেমান যথেষ্ট সহমর্মিতার সাথে উভয় মুসলমানের বক্তব্য
শোনেন। আর ক্রুশের বিপক্ষে চন্দ্রের আধিপত্য তুলে ধরাকে নিজের দায়িত্ব
হিসেবে মনে করতেন। অন্যদিকে অটোমান বাণিজ্যের পথে বাধা দিয়েও
সুলতানের শক্রতে পরিণত হয় পর্তুগিজরা । তারা হরমুজ দখল করে পারস্য
উপসাগরে প্রবেশপথ আটকে রেখেছিল। একই ভাবে এডেন দখল করে
লোহিত সাগর দখল করতে উচ্চাকাজ্মী ছিল পর্তৃগিজরা। এছাড়াও তিউনিসে
আটক খ্রিস্টান রাজার সাহায্যোর্থে নৌবাহিনী পাঠায় তারা । ফলে ক্রোধান্িত
সুলতান এশিয়া অভিযানের মনস্থির করেন।
কিন্ত মিশরের সুলেমান পাশা বয়সের ভারে এতটাই কাবু ছিলেন যে
চারজন লোকের সাহাষ্য লাগাত নিজের পায়ের ওপর দীড়াতে। কিন্তু তার
যুদ্ধজাহাজ বহর ছিল সত্ুরটি জাহাজ, স্থলবাহিনী ও জানিসারিসদের সমন্বয়ে
গঠিত অত্যন্ত দক্ষ ও তৎপর। সুতরাং লোহিত সাগরের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু
করে তুর্কি জাহাজ বহর । এডেনে পৌছে এর শাসক শেখকে হত্যা করে শহর
লুট করে এ অঞ্চলকে তুর্কি সানজাকে পরিণত করে সুলেমান পাশা ।
কিন্তু এরপর সুলতানের আদেশ অনুযায়ী পর্তুগিজদের পিছু ধাওয়া না
করে অনুকুল বাতাস পেয়ে পশ্চিম ভারতীয় উপকূলে যাত্রা করেন সুলেমান
পাশা । এখানে জিউ ছ্ীপে সৈন্য প্রেরণ করে পর্তৃগিজদের দুর্গ বরাবর কামান
তাক করেন পাশা । দুর্গের সৈন্যরা সাহসের সাথে আক্রমণ প্রতিহত করে ।
তুর্কিদের কাছে খবর পৌছায় যে গোয়ার বন্দরে পর্তুগিজ জাহাজ বহর
তৈরি হচ্ছে। তুর্কিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য। এই সময়ে এসে সুলেমান
পাশা কর্মজীবন থেকে অবসর গ্রহণ করে মক্কায় তীর্থ যাত্রায় গমন করেন।
পুরক্কারম্বরূপ সুলতানের উজিরদের মাঝে দিওয়ান পদ লাভ করেন । কিন্তু এর
পরে পূর্ব ভারতের উপকূলে তুর্কিরা আর আসেনি ।
কিন্ত্ব তারপরেও সুলতান ও পর্তুগিজদের মাঝে প্রতিযোগিতা লেগেই
ছিল। হারমুজ প্রণালি আটকে রেখে পারস্য উপসাগরে অটোমান বাণিজ্যের
পথে বাধা হয়ে দীড়িয়েছিল পর্তুগিজরা। ১৫৫১ সালে এদের হটাতে
পিরিরেইজের নেতৃতে ত্রিশটি জাহাজের এক বহর পাঠান সুলতান । পিরিরেইজ
গালিপল্লীতে জন্গ্রহণ করা একজন নাবিক ছিলেন। এ বন্দর সম্পর্কে তুর্কি
ইতিহাসবিদ লিখে গেছেন যে, “এখানকার ছেলেমেয়েরা জলের মাঝে কুমিরের
ন্যায় বড় হয়ে ওঠে। নৌকাই তাদের দোলনা ।” বাস্তবিক সমুদ্র অভিজ্ঞতার
মাঝে বড় হয়ে উঠায় পিরি একজন দক্ষ ভূগোলবিদ ছিলেন। আজিয়ান
ভূমধ্যসাগর ও আমেরিকার একটি অংশসহ পৃথিবী প্রথম দিককার মানচিত্র
তৈরি করেছিলেন তিনি। যুদ্ধের ময়দানে ওমানের মাক্কাট দখল করে হরমুজের
আশপাশের অঞ্চলের ক্ষতি করলেও এর দুর্গ দখল করতে পারেননি পিরি |
এরপর তিনটি বড় জাহাজ ভর্তি মূল্যবান সম্পদসহ পর্তুগিজদের চোখের
আড়ালে যেতে চাইলে একটি জাহাজ হারান তিনি। কিন্ত মিশরে নামার সাথে
সাথেই অটোমান বাহিনীর হাতে বন্দি হয়ে কায়ারোতে মৃত্যুবরণ করেন।
এরপর মুরাদ বে-কে এ দায়িত্ব দেয়া হলে সেও ব্যর্থ হলে পর আরেক
অভিজ্ঞ সমুদ্র পুরুষ সিরি আলী রেইসকে এ দায়িত্ব দেয়া হয়। তিনিও বিখ্যাত
একজন লেখক ছিলেন। গণিত, জাহাজবিদ্যা জ্যোতির্বিদ্যা, ধর্মতত্ত্ব ও কবিতা
সম্পর্কে জ্ঞান ছিল তীর। তার পোশাকি নাম ছিল কাতিবি রুমী ।
হারিকেনের কবলে পড়ে কোনো মতে প্রাণে বেঁচে যাওয়া সিরি গুজরাতে
আশ্রয় গ্রহণ করে। এরপর অনেক পরিশ্রম ও কষ্ট স্বীকার করে বাড়ি পৌছান।
নিজের অভিজ্ঞতা, আরবি ও পারস্য উৎস থেকে পাওয়া জ্ঞান কাজে লাগিয়ে
ভারত মহাসাগর সম্পর্কে দরকারি সব তথ্য লিখে গেছেন তিনি। কিন্তু এসব
সমুদ্রে সুলতান সুলেমান আর কখনোই আসেননি ।