আল্প আরসালান ভলিউম ৩২ বাংলা সাবটাইটেল উসমান অনলাইন
মৃত্যু
মহানায়কের প্রস্থান
৪৬৫ হিজরিতে (১০৭২ খ্রিষ্টাব্দ) সুলতান আলপ আরসান সিদ্ধান্ত নেন ট্রান্স অক্সিয়ানা অঞ্চলে অভিযান চালাবেন। সুলতানের সাথে এসময় দুই লক্ষ সেনার একটি বৃহৎ বাহিনী ছিল। আমু দরিয়ার তীরে পৌঁছে সুলতান আদেশ দিলেন নদীর ওপর পুল নির্মাণ করতে হবে। প্রায় বিশ দিন ধরে পুল নির্মাণের কাজ চলে। এরপর সেলজুকি সেনারা নদী পার হয়। নদী পার হওয়ার পর সুলতান একটি দুর্গ অবরোধ করেন। এই দুর্গের অধিপতি ছিলেন ইউসুফ আল খাওয়ারেজমি। তিনি বেশ কয়েকদিন সেলজুকদেরআক্রমণ প্রতিহত করেন।
দুর্গের পতন হলে তাকে সুলতানের সামনে উপস্থিত করা হয়। সুলতান তাকে তার কর্মকান্ডের জন্য তিরস্কার করেন। এক পর্যায়ে সুলতান তাকে হত্যার আদেশ দেন। ইউসুফ বলে ওঠে, “হে কাপুরুষ, আমার মতো মানুষকে কি এভাবে হত্যা করতে হয়’? একথা শুনে সুলতান রাগান্বিত হন। তিনি ইউসুফকে ছেড়ে দিতে আদেশ দেন। নিজে ধনুক হাতে নিয়ে ইউসুফের দিকে তির নিক্ষেপ করেন। সারাজীবন সুলতানের হাতের নিশানা ছিল অব্যর্থ।
কিন্তু এই প্রথম তার নিশানা লক্ষ্যভ্রষ্ট হল। ইউসুফ দ্রুত সুলতানের দিকে এগিয়ে আসে। তার জামার ভেতর খঞ্জর লুকানো ছিল। সে তড়িৎ খঞ্জর দিয়ে সুলতানকে আঘাত করে। সুলতান আহত হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। সেনাবাহিনীর লোকেরা দ্রুত এগিয়ে এসে ইউসুফকে ধরে ফেলে। তাকে হত্যা করা হয়।
সুলতান কয়েকদিন মুমূর্ষু অবস্থায় কাটান। এসময় তিনি বলেছিলেন, কদিন আগে আমি পাহাড়ের ওপর উঠে আমার সেনাবাহিনীর দিকে তাকিয়েছি। এই বিশাল সেনাবাহিনী দেখে তখন আমার বুক গর্বে ফুলে ওঠে। আমি মনে মনে বলি, পৃথিবীতে আমার চেয়ে শক্তিশালী আর কোনো শাসক নেই। আল্লাহ আমার এই গর্ব চূর্ণ করেছেন। তার এক দুর্বল সৃষ্টি দ্বারা আমাকে পরাস্ত করেছেন। আমি মনের এই খেয়ালের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাচ্ছি। চারদিন আহত থেকে রবিউল আউয়ালের ১০ তারিখ তিনি ইন্তেকাল করেন। দিনটি ছিল শনিবার।
মৃত্যু কালে সুলতান আলপ আরসালানের বয়স ছিল। ৪১ বছর। তাকে সমাহিত করা হয়েছিল তার মার্চ শহরে, তার পিতার কবরের পাশে। তার কবর ফলকে লিখে দেওয়া হয়েছিল, “যারা সুলতান আলপ আরসালানের আকাশসম জাঁকজমক দেখেছ, দেখো, তিনি এখন ধূসর মাটির নিচে শায়িত ……….
সুলতানের মৃত্যু সংবাদ বাগদাদ পৌঁছলে জনসাধারণ সুলতানের জন্য শোক প্রকাশ করতে থাকে। বন্ধ হয়ে যায় বাজারপার্ট ও বেচাকেনা। খলিফা নিজেও সুলতানের মৃত্যু তে কষ্ট পেয়েছিলেন। মৃত্যু র আগে সুলতান অলি আহদ হিসেবে তার পুত্র মালিক শাহকে মনোনীত করে গিয়েছিলেন। মালিক শাহ খলিফার কাছে একটি পত্র লিখে পিতার মৃত্যু সংবাদ জানান এবং খুতবার জন্য অনুমতি চান। খলিফা এ অনুরোধ মঞ্জুর করেন।
সুলতান আলপ আরসালানের ইন্তেকালের মধ্য দিয়ে ইসলামের ইতিহাসের একটি স্বর্ণালি যুগের অবসান হয়। ইমাম যাহাবি লিখেছেন, তিনিই ছিলেন প্রথম শাসক যাকে বাগদাদের মিম্বরে সুলতান বলে ঘোষণা করা হয়। তিনিই ছিলেন প্রথম কোনো তুর্কি শাসক,যিনি ফুরাত নদী অতিক্রম করেছিলেন।
সুলতান ছিলেন দীর্ঘদেহী, সুদর্শন। তার দাড়ি ছিল ঘন ও লম্বা। নিশানাতে ছিলেন খুবই দক্ষ। চেহারায় ছিল ব্যক্তিত্বের ছাপ। কেউ তার সামনে উপস্থিত হলে প্রভাবিত না হয়ে পারত না। তার দিকে তাকানো মাত্রই এক ভীতির সঞ্চার হতো। তিনি সবসময় লম্বা টুপি পরতেন।
সুলতান আলপ আরসালানের জীবন পর্যালোচনা করলে আমরা দেখি, তিনি নিজেকে উম্মাহর কল্যাণে নিয়োজিত করেছিলেন। নিরুপদ্রব জীবনের বদলে যোদ্ধার জীবনই তার কাছে প্রিয় হয়ে উঠেছিল। উম্মাহর দুর্দিনে তিনি ছিলেন উম্মাহর আশার আলো। আলপ আরসালানের জীবন ও কর্ম আমাদেরকে নিজেদের সকল প্রচেষ্টা ও কর্ম উম্মাহর কল্যাণে ব্যয় করার শিক্ষা দেয়।
হযরত উমর রা. একদিন তার সামনে উপস্থিত ব্যক্তিদের লক্ষ্য করে বলেছিলেন, যদি এই কক্ষ আবু উবাইদা ইবনুল জাররাহ, মুয়াজ ইবনু জাবাল এবং আবু হুজাইফার আযাদকৃত গোলাম সালেমের মত ব্যক্তিদের দ্বারা পূর্ণ থাকতো, তাহলে আমি তাদের সাহায্যে এই দ্বীনের কালিমাকে সুউচ্চ করার চেষ্টা চালাতাম ।
হযরত উমর রা.-এর এই উক্তি আমাদের সামনে তুলে ধরে উম্মাহর জন্য তার সন্তানদের কতটা প্রয়োজন। উম্মাহর জন্য কিছু ব্যক্তিত্ব প্রয়োজন যারা নিজেদের কোরবান করে উম্মাহর কল্যাণ সাধনে কাজ করে যাবেন। সুলতান আলপ আরসালান ছিলেন এমনই একজন ব্যক্তিত্ব।
আল্প আরসালান ভলিউম ৩২ বাংলা সাবটাইটেল