Alparslanসেলজুক

আল্প আরসালান ভলিউম ৩১ বাংলা সাবটাইটেল উসমান অনলাইন বাংলা

Alparsalan Volume 31 Bangla Subtitles Osman Online Bangla

আল্প আরসালান ভলিউম ৩১ বাংলা সাবটাইটেল উসমান অনলাইন বাংলা

৪৬৩ হিজরিত ২০ যিলকদ (২৬ আগস্ট, ১০৭১ খ্রিষ্টাব্দ), সুলতান আলপ আরসালান প্রস্তুতি নিলেন বাইজেন্টাইনদের মোকাবেলা করার। দিনটি ছিল শুক্রবার। সুলতান তার বাহিনীর জুমার নামাজ আদায় করলেন। তারপর তিনি মুনাজাতে প্রাণ খুলে কাঁদলেন। তার কান্না দেখে সেনাদের মাঝে কান্নার রোল পড়ে। তিনি সেনাদেরকে উদ্দেশ্য করে বললেন, আমরা একটি ক্ষুদ্র বাহিনী নিয়ে আজ এখানে উপস্থিত হয়েছি। এ যুদ্ধে হয়তো আমি লক্ষ্য অর্জন করে গাজি হব, অথবা শহিদ হয়ে জান্নাতে যাব। যদি আমি মারা যাই, তাহলে আমার পুত্র মালিক শাহ আমার উত্তরাধিকারী হবে। তোমাদের মধ্যে যার ইচ্ছা হয়, আমাকে অনুসরণ করো, যার ইচ্ছা হয় এখান থেকে ফিরে যাও।

আজ তোমাদের আদেশ করার জন্য এখানে কোনো সুলতান নেই। আজ আমিও তোমাদের মতোই একজন সাধারণ যোদ্ধা। যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য নিজেকে সমর্পণ করবে, তার জন্য রয়েছে দুনিয়াতে গনিমত ও আখেরাতে জান্নাত। আর যে ব্যক্তি পলায়ন করবে তার জন্য দুনিয়াতে রয়েছে অপমান ও লাঞ্চনা আর আখেরাতে অপেক্ষা করছে জাহান্নাম। আল্লাহ তাআলা বলেন, “হে ইমানদারগণ, যখন তোমরা কাফিরদের সাথে যুদ্ধের ময়দানে মুখোমুখি হও, তখন তোমরা তাদেরকে পৃষ্ঠপ্রদর্শন করে পলায়ন করো না।

আর যে লোক সেদিন পৃষ্ঠপ্রদর্শন করে পশ্চাদপসরণ করবে, অবশ্য যে লড়াইয়ের কৌশল পরিবর্তনকল্পে কিংবা যে নিজ সৈন্যদের নিকট আশ্রয় নিতে আসে সে ব্যতীত; অন্যরা আল্লাহর গযব সাথে নিয়ে প্রত্যাবর্তন করবে। আর তার ঠিকানা হলো জাহান্নানা বস্তুতঃ সেটা হলো নিকৃষ্ট অবস্থান”  সুলতান আবেগঘন কণ্ঠে কথা বলছিলেন। তার কণ্ঠ কাঁপছিল আবেগের আতিশয্যে। সুলতানের কথা শেষ হলে সেনাবাহিনীর সকল সদস্য একযোগে বলে উঠল, হে সুলতান, আমরা আপনার সাথেই আছি। আপনার যা ইচ্ছা করুন। আমরা আপনার সাথে আছি।

সেদিন সেনারা কেউ যুদ্ধের ময়দান থেকে পালিয়ে যায়নি, কেউ তাদের সেনাপতিকে নিরুৎসাহিত করেনি কিংবা কেউ কোনো অজুহাত দেখায়নি। তারা প্রত্যেকেই ছিল যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত। তারা জানতো, তারা এমন এক বাহিনীর মুখোমুখি হতে যাচ্ছে যাদের সংখ্যা তাদের চেয়ে অনেকগুণ বেশি। যাদের কাছে রয়েছে অত্যাধুনিক অস্ত্রশস্ত্র। (৩৭)

কিন্তু তবু সেলজুক সেনারা সেদিন হতাশ হয়নি। তারা নিজেদের সংখ্যাকে জয়-পরাজয়ের মাপকাঠি মনে করেনি। আর ইসলামের শিক্ষা এটিই। সকল শক্তি ও ক্ষমতার উৎস একমাত্র আল্লাহর হাতে। তিনি যাকে জয়ী করবেন তাকে পরাজিত করার কেউ নেই। আর তিনি যাকে পরাজিত করবেন তাকে জয়ী করার কোনো শক্তি নেই। সেলজুক সেনাদের এই দৃঢ়তা আমাদের জন্য শিক্ষণীয়। তারা জিহাদ থেকে পলায়ন করেনি কিংবা আমিরের অবাধ্যতাও করেনি। তারা আল্লাহর আদেশের মুখোমুখি হয়েছে নির্ভীকচিত্তে। তারা কোনো ‘হিকমাহ’ অবলম্বনের নাম করে জিহাদ থেকে পলায়ন করেনি। কারণ তারা জানতেন, হিকমাহ প্রয়োগ করা হয় কাজের ক্ষেত্রে, কাজ থেকে পলায়ন করার ক্ষেত্রে নয়।

সেনাদের সমর্থন পেয়ে সুলতান আলপ আরসালান ঘোড়ায় চড়ে বসলেন। তির-ধনুক ঠিক করে নিলেন। ঘোড়ার লাগাম ধরলেন নিজ হাতে। তারপর তিনি সাদা কাপড় পরে নিলেন। উপস্থিত সবাইকে লক্ষ্য করে বললেন, আজ যদি আমি নিহত হই তাহলে এই কাপড় হবে আমার কাফন। এরপর সুলতান তার বাহিনী নিয়ে এগিয়ে গেলেন শত্রুদের উদ্দেশ্যে। বাইজেন্টাইনদের কাছাকাছি পৌঁছে সুলতান ঘোড়া থেকে নেমে গেলেন। যুদ্ধের ময়দানের ধুলো মুখে ঘষে কান্না করতে থাকেন। সেসময় তিনি যুদ্ধে জয়ের জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করছিলেন।

সুলতানের এই কান্না ও মুনাজাতের দৃশ্য সেনাবাহিনীকে মনে করিয়ে দিচ্ছিল বদরের যুদ্ধের কথা। যেদিন নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যুদ্ধ শুরুর আগে বারবার আল্লাহর কাছে দোয়া করে সাহায্য ও বিজয় প্রার্থনা করছিলেন।(৩৮)

বাইজেন্টাইনরা তাদের বাহিনীকে পাঁচটি সারিতে বিন্যস্ত করেছিল। সুলতান জানতেন তার সেনাবাহিনীর স্বল্পতার কথা। ফলে তিনি তার বাহিনীকে বিন্যস্ত করলেন চন্দ্রাকৃতিতে, একটি সারিতে। ফলে তার সেনাসংখ্যা প্রকৃত সেনাসংখ্যার চেয়ে কিছুটা বেশি দেখাচ্ছিল। মুসলিম শিবিরে চলছিল কুরআন তিলাওয়াত, বাইজেন্টাইন শিবিরে বাজছিল যুদ্ধের নাকাড়া।

সুলতান আলপ আরসলান তার ঘোড়ায় আরোহণ করে সৈন্যবাহিনীর সাথে একত্র হয়ে আল্লাহু আকবার তাকবির দিয়ে বাইজেন্টাইনদের দিকে এগিয়ে গেলেন। মুসলিম সেনাদের তাকবিরের ধ্বনিতে চারপাশ কেঁপে উঠেছিল। এই চার্জটি এতটাই শক্তিশালী ছিল যে, মুসলিম সেনাদের ঘোড়ার পদাঘাতে যে ধুলো উড়ছিল তা বাইজেন্টাইন সেনাবাহিনীকে আচ্ছাদিত করে ফেলে।

যুদ্ধ শুরু হয়। দুই বাহিনী তীব্র আক্রোশে ঝাঁপিয়ে পড়ে একে অপরের ওপর। সেনাদের ঘোড়ার পদাঘাতে ধূলি উড়তে থাকে। ঝাপসা হয়ে ওঠে চারপাশ। মুসলিম সেনাদের তাকবির ও রোমান সেনাদের চিৎকারের ধ্বনি ভাসতে থাকে বাতাসে। সুলতান আলপ আরসালান এ যুদ্ধে একজন সাধারণ

সেনার মতোই লড়াই করছিলেন। তিনি বিরামহীনভাবে অস্ত্র চালাচ্ছিলেন। নিজের জীবনের পরোয়া না করে বারবার ছুটে যাচ্ছিলেন শত্রু সেনাদের রক্ষণব্যূহের দিকে। সুলতানকে এমন মরিয়া দেখে মুসলিম সেনারাও উজ্জীবিত হতে থাকে। তারাও সর্বাত্মকভাবে যুদ্ধে লড়তে থাকে। অবশেষে আল্লাহর পক্ষ থেকে সাহায্য আসে। বাইজেন্টাইনদের প্রচুর সেনা নিহত হয়। এক পর্যায়ে দেখা যায় পুরো ময়দানে শুধু তাদের লাশ আর লাশ দেখা যাচ্ছে। তারা পালাতে থাকে। তাদের সর্বাধিনায়ক রোমানোস বন্দি হয়। সে বন্দি হয়েছিল একজন মুসলিম সেনার হাতে। মুসলিম সেনা তাকে চিনতে না পেরে হত্যা করতে উদ্যত হয়েছিল। তখন রোমানোসের সাথে থাকা ক্রীতদাস চিৎকার করে বলে, ইনিই আমাদের সম্রাট, তাকে হত্যা করো না।

রোমানোসকে বন্দি করে সুলতান আলপ আরসালানের দরবারে নিয়ে আসা হয়। রোমানোস, যে কি না নিজের সেনাধিক্যের গর্বে যুদ্ধজয়ের আগেই মুসলিম নগরীগুলো ভাগ করে দিয়েছিল নিজের সেনাপতিদের মধ্যে, সে বন্দি হয়ে

উপস্থিত হলো সুলতান আলপ আরসালানের সামনে। যুদ্ধের শুরুতে তার মধ্যে যে দম্ভ ও অহংকার ছিল, তা চূর্ণ হয়েছে অনেক আগেই। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তালুত ও জালুতের ঘটনা উল্লেখ করতে গিয়ে বলেছেন, “যাদের ধারণা ছিল যে, আল্লাহর সামনে তাদের একদিন উপস্থিত হতে হবে, তারা বারবার বলতে লাগল—কত সামান্য দল কত বিরাট দলকে পরাজিত করেছে আল্লাহর হুকুমে।(৩৯)

রব যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তা তিনি বাস্তবায়ন করেন। বান্দার দায়িত্ব হলো নিজের সাধ্যমত চেষ্টা করে যাওয়া। তার নিয়তের সততা ও ইখলাসের কারণে আল্লাহ সাহায্য প্রেরণ করেন। আজকাল আমরা হতাশ হই, আল্লাহর সাহায্য আসছে না বলে হা-হুতাশ করি, কিন্তু এসবের জন্য দায়ী আমরা নিজেরাই। আমরা আমাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করছি না, তাই আল্লাহর সাহায্যও আসছে না।

সুলতানের সামনে রোমানোসকে উপস্থিত করা হলে তিনি তাকে তিনবার বেত্রাঘাত করেন। এরপর সুলতান বলেন, আমি তোমাকে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দিয়েছিলাম। রোমানোস বললো, তিরস্কার বাদ দিন। আপনার যা ইচ্ছা করুন।‘তুমি যদি আমাকে বন্দি করতে তাহলে আমার সাথে কেমন আচরণ করতে?’ সুলতান জিজ্ঞেস করলেন।অত্যন্ত খারাপ কাজটিই করতাম’, রোমানোস জবাব দিলো।

তোমার কী ধারণা, আমি এখন তোমার সাথে কী করব?’ সুলতান জিজ্ঞেস করেন। ‘হতে পারে আপনি আমাকে হত্যা করবেন অথবা মাফ করে দিবেন। অথবা আরেকটি কাজও করতে পারেন, অবশ্য তা বলে লাভ নেই’। ‘কী সেই কাজ?” সুলতান আগ্রহী হয়ে ওঠেন। ‘আপনি আমার কাছ থেকে কর নিয়ে আমাকে মুক্ত করে দিতে পারেন’, রোমানোস বলল।

এরপর সুলতান তাকে মুক্তিপণের বিনিময়ে মুক্তি দিতে সম্মত হন। মহানুভব সুলতান রোমানোসকে শরবত পান করতে দেন। রোমানোস সুলতানকে সম্মান দেখিয়ে তার দিকের ভূমি চুম্বন করে এবং এরপর খলিফাকে সম্মান দেখিয়ে বাগদাদের দিকে মুখ করে সেদিকের ভূমিও চুম্বন করে।

আলপ আরসলান তাকে চলে যাওয়ার অনুমতি দেওয়ার আগে রোমানোসের সাথে একটি শান্তি আলোচনা করেছিলেন। এই চুক্তি অনুসারে রোমানোস সুলতানকে এন্টিওক, এডেসা, হিরাপোলিস এবং মানজিকার্ট হস্তান্তর করেছিলেন। রোমানোসের মুক্তিপণ নির্ধারণ করা হয় ৫ লাখ দিনার। রোমানাস প্রায় এক সপ্তাহ সুলতান আলপ আরসালানের কাছে বন্দি ছিলেন। এই সময়ে সুলতান তার সাথে অত্যন্ত দয়া ও উদারতার আচরণ করেছিলেন।

সুলতান তাকে সাজসজ্জার জন্য ১০ হাজার দিনার দান করেছিলেন। রোমানোসকে বিদায় দেওয়ার সময় সুলতান তার সাথে একটি ছোট সেনাদল দিয়েছিলেন, যাদের দায়িত্ব ছিল রোমানোসের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। এই বাহিনীর সাথে একটি পতাকা ছিল, যাতে লেখা ছিল—না ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ

রোমানোস ফিরে আসছিলেন নিজের রাজ্যে, পথেই শুনতে পেলেন তাকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়েছে। কারণ স্পষ্ট, এত বড় পরাজয়ের পরেও তাকে আর ক্ষমতায় দেখতে চাইছিল না কেউ। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়েছিল তার বিরোধী পক্ষ। রোমানোস ফিরে আসার পর তাকে বন্দি করা হয়। কিছুদিন পর তাকে অন্ধ করা হয়।

মানজিকার্টের যুদ্ধ নিছক একটি যুদ্ধ নয়। এই যুদ্ধ আমাদের শেখায় রোমানোস এবং বাইজেন্টাইনদের আড়ম্বরপূর্ণ জাঁকজমকের বাহ্যিক প্রদর্শন তাদের কোন উপকারে আসেনি। তাদের সংখ্যাধিক্য তাদের

জয় নিশ্চিত করেনি। বিজয় রয়েছে আল্লাহর হাতেই। তিনি তাঁর বান্দাদের সম্মান ও জয় নিশ্চিত করেন। তিনিই কাফিরদের শক্তি খর্ব করে তাদের লাঞ্ছিত করেন। তিনি যে সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তাঁর বান্দাদের, তা নিশ্চিত আসবেই। এই যুদ্ধ শুরুর আগে সুলতান আলপ আরসালান নিজের শক্তি বা সেনাদের ওপর ভরসা করেননি। তিনি ভরসা করেছিলেন একমাত্র আল্লাহর ওপর। বারবার তিনি জয়ের জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করছিলেন। আল্লাহ তার দোয়া কবুল করে মুসলিম বাহিনীকে বিজয়ী করেন।

মানজিকার্টের যুদ্ধ আমাদের দেখায় জুমার দিনের শক্তি। জুমার দিন মুসলিমরা একত্র হয় এবং ঐক্যের শক্তিতে শক্তিশালী হয়ে ওঠে। জুমার দিন মুসলিমরা এক কাতারে একত্রিত হয়ে সালাত আদায় করে। তাদের মাঝে ভ্রাতৃত্ব ও ঐক্যের যে বন্ধন গড়ে ওঠে, তা-ই তাদেরকে যুদ্ধের ময়দানে শক্তিশালী করে তোলে। সেখানেও তারা কাতারবদ্ধ হয়ে দুশমনের মুখোমুখি হয়।

মানজিকার্টের যুদ্ধের পর প্রায় এক হাজার বছর পার হয়েছে। সুলতান আলপ আরসালান আর নেই, বাইজেন্টাইন সম্রাট রোমানোসও নেই। তবে তাওহিদ ও কুফরের এই সংঘাত থেমে নেই। একের পর এক যুদ্ধে দ্বীনের জন্য নিবেদিতপ্রাণ মুজাহিদরা মুখোমুখি হচ্ছে কুফরের পূজারিদের। নতুন শতাব্দীর প্রথম দশক থেকেই ক্রুসেডারদের নগ্ন থাবা আঘাত করছে মুসলিম বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে। ক্রুশের ধ্বজাধারীদের অহংকার ধুলোয় মিটিয়ে দিতে তাকবিরের ধ্বনি উচ্চারিত হচ্ছে হিন্দুকুশ পর্বতমালা থেকে সিরিয়ার সমতলভূমি পর্যন্ত। ধীরে ধীরে পৃথক হয়ে যাচ্ছে ইমান ও কুফরের শিবিরদু’টি। ইতিহাসের এই সন্ধিক্ষণে মুমিনদের সামনে উপস্থিত হয়েছে বড় একটি প্রশ্ন, তারা কোন পক্ষ অবলম্বন করবে? তারা কোন শিবিরে যোগ দিবে?

আল্প আরসালান ভলিউম ৩১ বাংলা সাবটাইটেল

 

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button