আল্প আরসালান ভলিউম ১৯ বাংলা সাবটাইটেল – উসমান অনলাইন বাংলা
ভলিউম দেখতে পোস্টের নিচে যান
অটোমান সাম্রাজ্য ভেনিসের সাথে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে, যার ব্যপ্তি
ছিল ষোলো বছর। ১৪৭২ সালের শরতে নিজ জ্যোতিষির সাথে আলোচনা করে সুলতান
মাহমুদ বিশাল এক সেনাবাহিনী নিয়ে এশিয়া অতিক্রম করে পূর্বে এগিয়ে
যান। বসন্তে আরো পূর্বে এগিয়ে গিয়ে আরজিনজানে পৌছান। উজুন হাসান
সুলতানের ঢেউয়ের মতো সেনাবাহিনী দেখে ইউফ্রেটিসের ওপর অববাহিকাতে
পর্বতের আড়ালে নিজের সেনাবাহিনী নিয়ে গা-ঢাকা দেয়। এখানে সুলতান
নিজের জেনারেলদের মাঝে প্রিয়তম হাস মুরাদ পাশাকে আক্রমণ শুরু করার
নির্দেশ দেন। মুরাদ পাশার অধিকাংশ সৈন্য শত্রুর অতর্কিত আক্রমণের মুখে
পড়ে । মুরাদ নিজে ইউফ্রেটিসের পানিতে ডুবে মারা যায়।
এই পরাজয়ে ও নিজের প্রিয়তম জেনারেলের মৃত্যুতে বিমর্ষ হয়ে সুলতান
পিছু হটার নির্দেশ দেন। কিন্তু এর আগে নিজের জেনারেলদের সাহস বজায়
রাখার জন্য সুলতান স্বপ্নে দেখতে পেয়েছেন তিনি উজুন হাসানের সাথে
হাতাহাতি ছন্দে হাসানের হত্খপিণ্ড মাটিতে গেঁথে ফেলেছেন বলে জানান। বাস্তবে
মাহমুদ আরজিনজানের পূর্বে পার্বত্য এলাকা দিয়ে সেনাবাহিনী নিয়ে যাওয়ার
সময় উজুন হাসানের সাথে যুদ্ধ হয়।
আট ঘণ্টা যুদ্ধ করার পর শ্বেত ভেড়ার
নেতা উজুন হাসান পালিয়ে যায়। সেনাবাহিনীও নেতার পথ ধরে। সব
মালামালসহ উজুন হাসানের পুরো তাবু অটোমানদের হাতে এসে পড়ে।
সুলতান নিজে যুদ্ধক্ষেত্রে তিন দিন কাটিয়ে বন্দিদের মৃত্যুবরণের দৃশ্য দেখেন।
কিন্ত সুলতান ছিলেন শিল্পের সমঝ্দার । তাই পণ্ডিত ও কারিগরদের বাঁচিয়ে
ইস্তাম্ুল পাঠিয়ে দেয়া হয়। পরবর্তীতে ১৪৭৮ সালে উজুন হাসানের মৃত্যু
ঘটে।
ইস্কান্দার বেগের মৃত্যুর পর সুলতান আবারো আলবেনিয়ার দিকে নজর
দেন। সুলতানের বিশাল সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে ছিলেন সুলেমান পাশা।
বসনিয়ার নপুংসক সুলেমান স্কুটারি দুর্গের সামনে তাবু ফেলে । ছয় সপ্তাহ ধরে
কামানের গোলা ফেলে দেয়াল ধুলি ধুসরিত করা হয়। এই দীর্ঘ সময়ে
অটোমানদের হাজারো ক্ষতি হয়। ডজনখানেক জেনারেল মারা যায়, অসংখ্য
সৈন্য মারা যায় তৃষ্জায় একপ্রকার জর হয়ে । অবশেষে সুলেমান পাশা অবরোধ
তুলে নিয়ে কামান নিয়ে চলে যায়।
কিন্তু আলবেনিয়াবাসী জানত যে সুলতান আবারো আসবেন। এবং তাই হয়৷ তিনি বছর পরে সুলতান আবারো “ঈগলের
বাসা” খ্যাত ক্রোইয়াতে আসেন। প্রায় বছরখানেক অবরুদ্ধ থাকার পর শহরটি
সুলতানের কাছে আত্মসমর্পণ করে। এরপর সুলতান স্কুটারির দিকে পূর্ণ
মনোযোগ দেন। ইতিমধ্যেই এর দুর্গ থেকে একটি দৃশ্য প্রায়ই চোখে পড়ত
আর তা হলো তুর্কিদের কৃত কর্মের জন্য আলবেনিয়ার গ্রামগ্ডলো থেকে ধোয়া
উড়ছে। দুর্গের ভেতর শহরও বোমার আঘাতে ক্ষত-বিক্ষত হয় । তেলের মাঝে
চুবানো ময়লা ন্যাকড়া মিসাইলের মতো শহরের ওপর এসে পড়ে। বৃদ্ধ এবং
শিশুদেরকে বাধ্য করা হয় ঘরের নিচে সেলারে আশ্রয় নিতে আর সামর্থ
লোকেরা ব্যস্ত হয়ে পড়ে ছাদের আগুন নেভাতে । অনেক সময় আগুন যাতে না
ছড়িয়ে পড়ে তাই ছাদ ভেঙে ফেলা হতো। তুর্কিরা দুটি বড় ধরনের ক্ষতি
করলেও কোনো সফলতা না পেয়ে সুলতান সেনাবাহিনী নিয়ে পিছু হটার
মনস্থির করেন। একটি বাহিনী রেখে যান অবরোধ কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার
জন্য। কিছুদিন পরেই প্রায় বিচ্ছিন্ন এ অঞ্চলে জনগণ উপোস করতে থাকে ।
শুধু রুটি এবং পানি ছাড়া কোনো ধরনের মাংস এমনকি ইদুর, বিড়ালের
মাংসও অপ্রতুল হয়ে পড়ে।
অবশেষে ১৪৭৯ সালে সুলতানের সাথে ভেনেশীয়রা শান্তিচুক্তিতে আসতে
বাধ্য হয়। স্কুটারি, ক্রোইয়া, মোরিয়ার দক্ষিণে পার্বত্য উপত্যকাসহ ষোলো
বছরের যুদ্ধে জয় করা বিভিন্ন অঞ্চল অটোমানদের ছেড়ে দেয় ভেনেশীয়া।
বিপুল অক্কের করের বোঝা চাপে ভেনেশীয়াদের ঘাড়ে । এর পরিবর্তে ব্যবসা-
বাণিজ্যের স্বাধীনতা এবং ইস্তাম্বুলে তাদের নাগরিকদের অধিকার রক্ষায়
কনস্যুলেট স্থাপন করা হয়। আজিয়ান এবং ভূমধ্যসাগরের শক্তিশালী
নৌশক্তিকে নিজের মতের পক্ষে আনতে বাধ্য করেন মাহমুদ । এর মাধ্যমে
ইটালি আক্রমণের জন্য সমুদ্বপথ পরিষ্কার করেন সুলতান।
এই আক্রমণ শুরু হয় ১৪৮০ সালে। হঠাৎ আক্রমণের মাধ্যমে প্রচুর
আগুন এবং রক্তের বিনিময়ে অটরানটো শহর দখল করে অটোমানরা । শহরের
আট হাজার অধিবাসীকে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হয় ইসলামে ধর্মান্তরিত হতে
প্রত্যাখ্যান করায় । বিন্দিসি, লেসি, টারানটো প্রভৃতি জায়গায় আক্রমণ করলেও
নেপলসে শক্তিশালী বাহিনীর হাতে পরাজয় ঘটে তাদের ।
অটরানটোকে ঘাঁটি বানিয়ে ইটালিতে আক্রমণ চালানোর পরিকল্পনা করেন সুলতান । কিন্তু এর
অধিবাসীদের অসহযোগিতার ফলে ছোট একটি দুর্গ স্থাপন করেন কেবল
রটনা ছড়িয়ে পড়ে যে সুলতান নিজেই ইটালি আক্রমণ করতে আসছেন; তাই
পোপ আভিগন্ন পালিয়ে যান। কিন্তু সুলতান এবং তাঁর সেনাবাহিনী ইটালি
আক্রমণের স্বপ্ন বাস্তবে রূপ দিতে ব্যর্থ হয়। তাই অটোমানরা ইটালির মাটি
ছেড়ে রোডস্ আইল্যান্ডে চলে যায়!
রোডস আইল্যান্ডের শেষ ক্রুসেডার যোদ্ধারা অনেক পূর্ব থেকেই আক্রমণ
হওয়ার আশঙ্কা করে আসছিল । এদের নেতা ছিলেন পিয়েরে ডি আবুসন।
বিভিন্ন রসদ এনে দুর্গে মজুদ করেছিল । এছাড়াও মিশর এবং তিউনিসিয়ার
মুসলিম নেতাদের সাথে জোট বেঁধেছিল রোডস আইল্যান্ড। এসব দেখে মেসি
পাশার নেতৃতে ১৪৭৯ সালে অশ্বারোহী সৈন্যদল রোডস আইল্যান্ড
আক্রমণ করলেও সফল হতে পারেনি । এরপর বসন্তে আরো বড় প্রায় সত্তর
হাজার সৈন্য ও পঞ্চাশটি জাহাজ ভর্তি ভারী অস্ত্র নিয়ে আক্রমণ করে মেসি
পাশা।
কয়েক সপ্তাহ ধরে বোমা ফেলার পর জুলাইয়ের শেষ সপ্তাহে মূল আক্রমণ
শুরু হয়। এর আগের দিন সারা দিন ধরে অটোমানরা যুদ্ধের বাজনা বাজায়
নিজেদের মানসিক শক্তি বৃদ্ধি করে শক্রকে মনোবলহীন করতে । এর উত্তরে
আইল্যান্ডবাসীরাও গির্জায় ঘণ্টা বাজায়। এরপর ঢেউয়ের মতো অটোমান
সৈন্যরা দুর্গপ্রাটীর ধ্বংস করে ইটালির টাওয়ারের চূড়ায় ওঠে অটোমান স্তপ্ত
স্থাপন করে। এদের পেছনেই আসে দুই সারিতে জানিসারিসরা ।
মেসি পাশা বিশ্বাস করতে শুরু করে যে এটি তার দিন। ধ্বংসলীলা
বন্ধ করে আদেশ দেন যে রোডস্-এর সম্পদ শুধু সুলতানের । কিন্তু এর
ফলে সৈন্যদের যুদ্ধধদেহী মনোভাব নষ্ট হয়ে যায়। এর মাঝে রোডস্
আইল্যান্ডের নাইটস্ সৈন্যরা অট্যোমানদের ওপর চড়াও হয়ে লাশের পাহাড়
বানাতে থাকে । অবশেষে নাইট সৈন্যরা টাওয়ারের মাথায় ওঠে অটোমান স্ত
স্ত মাটিতে ফেলে দেয়। এর ফলে বাকি অটোমান সৈন্যরাও সাহস হারিয়ে
পালিয়ে যায়।
অবরোধ তুলে নেয়া হয়। অটোমান সৈন্যরা মারমারাতে একত্রিত হয়ে ইস্তাম্বুলে
ফিরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেয়। রোডস্-এর শহর ধ্বংস হয়ে গেছে। কিন্তু লাল
জমিনের ওপর সেইন্টজনের সাদা ক্রসের বিজয় পতাকা বিশ্বাসের ভিত্তি
হিসেবে উড়তে থাকে ! এখনকার মতো এক প্রজন্ম ধরে চলতে থাকা বিজয়
অভিযানের দিন শেষ হয়ে আসতে থাকে মাহমুদের ।
॥১০ ॥
এক নতুন বিশ্বে ইসলামিক সাম্রাজ্য গড়ার উচ্ছাকাজ্্া থেকে মাহমুদ
বাইজেন্টাইন অঞ্চলকে শুধু বিস্তৃত করতে চাননি; বরঞ্চ আভ্যন্তরীণভাবে ও
নতুন রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলতে চেয়েছেন! প্রশাসন, আইন, সামাজিক এবং
অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেও নতুন প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে চেয়েছেন। গাজীদের
সমাজব্যবস্থা অবশেষে একটি কেন্দ্রীয় সাপ্রাজ্যের রাষ্ট্রের মাধ্যমে সামাজিক ও
রাজনৈতিক আকার লাভ করে।
এখানে মূলত একটি উচ্চ শ্রেণীর সুশৃঙ্খল আমলাতন্ত্রের মাধ্যমে সুলতান
সর্বময় ক্ষমতা ভোগ করতেন । মাহমুদের কাজ ছিল তার নিজের ক্ষমতার প্রতি
হমকিস্বরূপ যেকোনো কিছুকে বিনাশ, নিয়ন্ত্রণ অথবা পরিবর্তন করে ফেলা।
রাষ্ট্রের মঙ্গলার্থে ভ্রাতৃহত্তা বিচারকদের সম্মতি পেয়ে বসে সাম্রাজ্যজুড়ে।