অনুবাদ মিডিয়া আল্প আরসালান ভলিউম ১৮ বাংলা সাবটাইটেল –
ভলিউম দেখতে পোষ্টের নিচে যান
সেনাবাহিনীতে খ্রিস্টানদের মাঝ থেকে বেছে বেছে সৈন্য নিয়ে শৃঙ্খলিত একটি
বাহিনী গড়ে তোলে যারা সুলতানকে ব্যক্তিগতভাবে সেবা প্রদান করত।
এদেরকে বলা হতো জানিসারিসদের বাহিনী বা “নতুন সৈন্যদল” | অর্খানের
শাসনামলে এরা ছিল দেহরক্ষী আর মুরাদ এদেরকে মিলিশিয়া বাহিনীতে
পরিণত করেন! ইউরোপে জয়ে করা খ্রিস্টান অঞ্চলসমূহের প্রতিরক্ষার কাজ
করার জন্যই এদের প্রস্তুত করা হয়েছিল।
বলপূর্বক ধর্মীস্তরিত চর্চার ওপর নির্ভর করে প্রতিটি বিজয়ী অঞ্চল থেকে এই নীতির ওপর ভিত্তি করে
সেনাবাহিনী তৈরি করা হয়েছিল। কর প্রধানের মাধ্যমে সামরিক সেবাকাজ
থেকে অব্যাহতি পাওয়ার নিয়মটুকু একটি নির্দিষ্ট বয়স পর্যন্ত খ্রিস্টান
বালকদের ক্ষেত্রে মানা হবে না। এদের মধ্য থেকে অটোমান প্রশাসকরা নির্দিষ্ট
সৈন্যদের নিয়োগ দান করত ।
যাদেরকে তাদের পরিবারের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করে মুসলিম ধর্মে বড় করা হতো। তাদের কাজ ছিল সুলতানের কাজ করা,
ব্যক্তিগতভাবেও তারা সুলতানের ওপর নির্ভর করত আর সুলতান তাদেরকে
অন্যান্য সেনাদের চেয়ে বেশি অর্থ বেতন দিত। পৌরুষদীপ্ত শারীরিক গঠন,
বৃদ্ধিমস্তা, কঠোর প্রশিক্ষণ, সুশৃঙ্খল এবং যে কোনো কষ্ট করতে প্রস্তুত হওয়ার
কারণে তারা ছিল সন্যাসীদের মতো। বিয়ে করতে পারত না, নিজের জমি
রাখতে পারত না, অথবা অন্য কোনো কাজ করতে পারত না। সুলতানের
নির্দেশানুযায়ী সামরিক সেবা কাজেই তারা তাদের জীবন উৎসর্গ করত।
খ্রিস্ট ধর্মের পরিবর্তে এরা বেড়ে উঠত দরবেশের বেকতাশী নিয়মানুযায়ী,
যাদেরকে অর্থান অসম্ভব রকম মান্য করত। এ দরবেশের জন্য তিনি বার্সাতে
আশ্রমও নির্মাণ করে দিয়েছিলেন। দরবেশদের শেখ হাজী বেকতাশ নতুন
সেনাবাহিনীকে আশীর্বাদ করত আর তাদের মর্যাদার চিহ্ন দিত। যেখানে
অর্ধচন্দ্র ও ওসমানে দ্বিমুখী তলোয়ার অফ্কিত থাকত।
প্রথম সৈনিকের মাথার ওপরে নিজের কোটের হাতা রেখে শেখ এর ভবিষ্যৎ বর্ণনা করত “এর
মুখমণ্ডল হয়ে উঠবে উজ্জ্বল ও চমকপ্রদ, এর বাহু শক্তিশালী তলোয়ার হয়ে
উঠবে, পিপাসার্ত, ধনুক হয়ে উঠবে তীক্ষধার। এটি সব যুদ্ধেই জয় হবে আর
বিজয় ছাড়া কখনোই ফিরে আসবে না।”
এই ভবিষ্যদ্বাণী শুনে জানিসারিসদের সাদা টুপি পদাতিক সৈন্যদের মাথায়
শিরস্ত্রাণ_-তাতে পালক লাগানো হয়। এ সেনাবাহিনীর পরিচয় চিহ্ন অন্যান্য
সৈন্যদের চেয়ে তাদের জীবন যাত্রার উচ্চ মানকে নির্দেশ করত; এটি ছিল
চামচ ও পাত্র। ক্যাম্পের রান্নাঘর থেকে এর অফিসারদের পদমর্যাদা চিহ্নিত
হতো ।_ প্রথম স্যুপ প্রস্তুতকারক থেকে শুরু করে প্রথম রীধুনী, প্রথম পানি
বহনকারী রেজিমেন্টের প্রধান পাত্র ছিল স্যুপ তৈরির পাত্র। এর চারপাশে জানিসারিসরা
একত্রিত হতো । খাবার জন্য নয়, নিজেদের মাঝে আলোচনা করার জন্য।
ইউরোপের জনগণ পূর্ব থেকে আগত এসব তুর্কিদের নৈতিক অবক্ষয়মূলক
এসব কর্মকাণ্ড নিয়ে কথা বলতে শুরু করে । যেখানে খ্রিস্টানদের ওপর রক্তের
করারোপ করা হয়। তরুণদেরকে নিয়ে দাস বানানো হয়, পিতা-মাতার কাছ
থেকে আলাদা করা হয়, অপরিচিত ধর্ম চাপিয়ে দিয়ে এক ধরনের অনুগত
জীবন-যাপন পদ্ধতিতে বাধ্য করা হয়।
এক্ষেত্রে বেতন-ভাতাকে সামরিক বয়সানুযায়ী ঠিক করা হয়। যেখানে শক্রর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করাটাকে জীবন
ধারণের উপাদান হিসেবে ঠিক করা হয়। এ শতাব্দীতে খ্রিস্টানরাও প্রায় অন্যদের
সাথে তাদের ব্যবহারের ক্ষেত্রেও হয়ে ওঠে নির্দয়। বলকান অঞ্চল হয়ে ওঠে এক
ধরনের যুদ্ধক্ষেত্র যেখানে খ্রিস্টানরা অনবরত তুর্কিদের হয়ে যুদ্ধ করে চলে।
একবার নাম নিবন্ধ হয়ে গেলে এসব তরুণের উচ্চ শ্রেণীর শারীরিক
প্রশিক্ষণ ও কারিগরি দক্ষতা অর্জন করত । উচ্চশিক্ষা পেত, তাদের সামর্থ্যকে
বাড়ানোর জন্য ব্যারাকের নিয়ম-কানুন ও আমোদ-প্রমোদের মধ্যে একটি সুস্থ
সাম্যাবস্থা বিরাজমান ছিল আর ছিল জীবনব্যাপী সুনিশ্চিত বৃত্তি। ফলে নিজের
রেজিমেন্টের প্রতি গড়ে ওঠে গর্বিত ভাব, সার্বভোমত্র প্রতি বিশ্বস্ততা এবং
এক ধরনের একাত্মত্বাবোধ, যার ভিত্তি ছিল ধর্ম।
এ ধরনের সামরিক দাসত্ব প্রথায় খরস্টান-বিশ্ব স্তভিত হয়ে যায়। কিন্তু
ইসলামিক বিশ্ব, বিশেষ করে তুর্কিদের সাথে তারা যথেষ্ট পরিচিত ছিল। এদের
কাছে ক্রীতদাসোচিত সেবা পেয়েছে খ্রিস্টানদের পূর্ব ইতিহাস। আব্বাসীয়
খলিফার আমলে মধ্য এশিয়ার অনুর্বর ভূমি থেকে অ-মুসলমান তুর্কিদেরকে
ধরে নিয়ে উপটৌকন হিসেবে প্রদান করা হতো অথবা দাস হিসেবে ক্রয়-
বিক্রয় করা হতো। তারপর ধর্মান্তরিত করে মুসলমান হিসেবে বাগদাদে সৈন্য
অথবা প্রশাসক হিসেবে গড়ে তোলো হতো।
ব্রড কাহেন লিয়ে গেছেন-“এ ধরনের দাসিদের যোগানের ফলে এদের পদমর্যাদা ছিল গৃহকর্মীদের তুলনায়
অনেক ওপরে, ব্যক্তিগত পর্যায়ে এদের রাখা হতো যে এতে তুর্কি জনগণ
নিজেরাই কোনো সমস্যা বোধ করেনি বা ক্রোধাৰিত হয়নি। সে সময়ে দাসত্ব
নিয়ে কারো মনে কোন ভাবের উদ্রেক হয়নি। যা পরবর্তীতে হয়েছিল।”
এভাবে অনেক তুর্কি-ই পরবর্তীতে পদোন্নতি পেয়ে উচু সামরিক পদে অথবা
প্রশাসনে আসীন হয়েছিল ।
সামানিড রাষ্ট্রে রাজবংশ সংরক্ষণের ক্ষেত্রে তাদের ক্ষমতা প্রমাণিত হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত একে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে নিজেদের নতুন
ংশধারা তৈরি করে তারা । দাস থেকে উদ্ভূত হয়ে রাজংবশের প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে
তুর্কিরা একইভাবে সফল হয়েছিল মিসরে । তুলুনিডস এবং পরবর্তীতে মামলুক
প্রথম দিকে সালাদীন এবং আযুবিদ রাজবংশের ।